একটি পুত্র সন্তানের আশায় ১৩টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তবু হাল ছাড়েননি। ফলাফল অবশ্য হাতে নাতে। কারণ ১৪তম সন্তানটি যে তাদের পুত্র। কিন্তু একটি হলেও হবে না স্বামীর আরও একটি পুত্র সন্তান চাই। এ কারণে আবারও সন্তান নেন স্ত্রী। কিন্তু তাদের ১৫তম সন্তানটি হলেন আবার কন্যা। স্বামীর আশা পুত্রের জন্য শেষবারের মতো চেষ্টা করে দেখবেন আদিবাসী দম্পতি রামসিন সংগোদ ও তার স্ত্রী কানু।
পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা যে কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তা এই দম্পতিকে না দেখলে ভাবা যায় না। গুজরাটের ঝারিভুজি গ্রামে দরিদ্র কৃষক রামসিং চেয়েছিলেন পুত্র সন্তানের জনক হতে। কিন্তু তাদের পরপর সবগুলি সন্তানই হয় কন্যাসন্তান। রামসিংয়ের স্ত্রী কানু জানান, সেইসময়, রামসিং তাকে ভয় দেখাতে থাকেন, পুত্রসন্তান না হলে, তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করবেন। অনাথ কানু স্বামীর ঘরছাড়া হওয়ার ভয়ে আবার সন্তানধারণে রাজি হয়ে যান৷ সেবার তাদের পুত্রসন্তানই হয়। আনন্দে ছেলের নাম রেখেছিলেন বিজয়। কিন্তু এবার রামসিনের নতুন আবদার শুরু হয় দ্বিতীয় পু্ত্রসন্তানের জন্য। কিন্তু তাদের ১৫তম সন্তানটিও কন্যাসন্তানই। তবু হতাশ নন রামসিং। তিনি এখনও শেষ চেষ্টা করে দেখতে চান৷ ২ অগস্ট ১৪তম কন্যার জন্মের পরই পরের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন তিনি।
স্বামীর দাবিতে প্রায় প্রতিবছর সন্তানধারণের যন্ত্রণা নিতে নিতে ক্লান্ত রামসিংয়ে স্ত্রী কানু। গত ১৫ বছর ধরে প্রায় প্রতি বছর ধরেই তিনি গর্ভযন্ত্রণা পেয়ে চলেছেন। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে৷ তাদের বয়সও মোটে ১৭ ও ১৫। শেষ সন্তানটির বয়স এখনও ২ বছর হয়নি। এর মধ্যেই আরও এক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এরই মধ্যে আবার সন্তানধারণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতও নন তিনি। স্বামীকে তিনি জানিয়েছেন, এই ধকল তিনি আর নিতে পারবেন না। ৩৩ বছরের কানু জানিয়েছেন, তার শরীরও অশক্ত। কিন্তু কানুর সে কথায় কান দিতে চান না রামসিন। তিনি চাইছেন শেষবারের মতো চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে।
কেন এইভাবে হন্যে হয়ে পুত্রসন্তান চাইছেন তারা? তাদের সম্প্রদায়ের রেওয়াজ যে, বোনের বিয়েতে দাদা বা ভাইকে পাত্রপক্ষের সমস্ত দাবিদাওয়া মেটাতে হয়। বর্তমানে ১৮ মাস বয়সী বিজয় যে তা করে উঠতে পারবে না তা জানেন রামসিং। আর তাই দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্য জিদ তার। কিন্তু কিছুদিন আগেও স্বামীর মতে সহমত থাকলেও, এখন অশক্ত শরীর নিয়ে আর রাজি হতে চাইছেন না কানু। তার বক্তব্য, এবার অন্তত মেনে নেওয়া উচিত যে, সৃষ্টিকর্তা তাদের একটি সন্তানই দিতে চেয়েছেন।
রামসিনের গ্রামে প্রায় সকলেরই আটটি কিংবা নটি করে সন্তান। কিন্তু পুত্রসন্তানের মোহে এই আদিবাসী দম্পতি যেন সব সীমা অতিক্রম করে গেলেন। দেশে শিক্ষার তথাকথিত প্রসার ও কন্যাসন্তান বাঁচানোর প্রকল্প ইত্যাদি যে কতটা দেখনদারি, বাস্তবের জমিতে কতটা অকৃতকার্য তাও প্রায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে রামসিংয়ের এই পুত্রসন্তানের মোহ।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ আগস্ট, ২০১৫/মাহবুব