৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ১৪:৫৩

নদীর চরে পিয়াজসহ বিভিন্ন চাষ, ভূমিহীনদের দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর থেকে

নদীর চরে পিয়াজসহ বিভিন্ন চাষ, ভূমিহীনদের দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য

আত্রাই নদীতে জেগে ওঠা চর এলাকায় পিয়াজসহ বিভিন্ন চাষাবাদ স্থানীয় ভূমিহীনদের দারিদ্রতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকেরা। 

আর এ নদীর চরে পিয়াজসহ বিভিন্ন চাষেই ভাগ্যবদল হয়েছে অনেক ভূমিহীন কৃষকের। 

আত্রই ছাড়াও গর্ভেশ্বরী, পুনর্ভবা, ছোট যমুনাসহ বিভিন্ন নদীর মাঝে পিয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন চাষাবাদ করছে ভূমিহীন কৃষকরা। নদীর চরে চাষ করেই ২০ জনের সংসার স্বচ্ছলভাবে চালাচ্ছেন তারা। বছরের ৬ মাস এ চরে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক কৃষক।

দিনাজপুরের দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউপির ঝানঝিরা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীতে শুকনো মৌসুমে চর পড়ে যায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নদী তীরবর্তী ভূমিহীনরা এ চরকেই চাষাবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। চর এলাকাকে চাষের যোগ্য করে তুলতে পরিবারের সবাই এক সঙ্গে কাজ করে। আর নদীর চরে চাষ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এনে দিয়েছে অনেকের।

এবারেও আত্রাই নদীর চরে পিয়াজ চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষককেরা। পিয়াজ গাছের সবুজ রঙে বদলে গেছে নদীর চিত্র। অধিকাংশ চাষী গত ৩/৫ বছর থেকে জেগে ওঠা চরে পিয়াজ চাষ করছেন। নভেম্বর মাস থেকে নদীতে পানি কমে গেলে বালু চরে পিয়াজ চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য নেমে পড়েন চাষীরা। 

পিয়াজ চাষীরা জানান, নিজস্ব জমি না থাকায় তারা নদীর জেগে উঠা চরে চাষাবাদ করে থাকেন। বর্ষার সময় পানির সঙ্গে যে পলি পড়ে তা ক্ষেতের সার হিসেবে কাজে লাগে। তাই অতিরিক্ত সার দিতে হয় না এবং সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। এ কারণে নদীর চরে পিয়াজ চাষ লাভজনক।
চাষী হোসেন আলী দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউপির ঝানঝিরা আবাসন এলাকার বাসিন্দা। তিনি আত্রাই নদীর চরের ১ একর জমিতে পিয়াজ, ১০ কাঠা জমিতে কুমড়া ও ৩ একর জমিতে আখের চাষ করেছেন। বাণিজ্যিকভাবে পিয়াজ চাষে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। আর এই চরের ক্ষেত হতে ৪ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন তিনি।

ভূমিহীন চাষী হোসেন আলী জানান, নদীতে পিয়াজ চাষে একর প্রতি খরচ হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। বিপরীতে এক একর জমিতে পিয়াজ আসে ৪০ মণের অধিক। তা দিয়েই আমাদের কয়েক মাসের খাবারের জোগান হয়। 

হোসেন আলী, আলতাফ হোসেন, মজিবর রহমানসহ ২০ জনই বসবাস করছেন ঝানঝিরা আশ্রয়ণে। নিজের জমি না থাকায় বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে গত কয়েক বছর ধরে পিয়াজ চাষ করছি। পিয়াজ আবাদের আয় থেকে পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। তবে গত বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। আবার ঘুরে দাড়াতে চেষ্টা করছি। তাই স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই এক সঙ্গে কাজ করছি। 

আলতাফ হোসেন জানান, আত্রাই খরস্রোতা নদী। এই নদীর চরে কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ভালভাবে চাষ করা যায়। সামান্য পরিচর্যা ছাড়া কোনও প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। উৎপাদিত কুমড়া দিনাজপুরের আশেপাশের জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় পাইকারি বাজারে সরাসরি বিক্রি করা হয়।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর