২৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৩১

ক্রিকেটীয় জ্ঞান

আপনার ভাবি আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। বলেছিল, যে দল বাদ পড়বে, সে কোনোভাবেই সুপার টুয়েলভে খেলতে পারবে না। সত্যিই কিন্তু তাই হয়েছে...

ইকবাল খন্দকার

ক্রিকেটীয় জ্ঞান

ফাইল ছবি

যেহেতু রবীন্দ্রনাথের আমলে ক্রিকেটের এই দাপটটা ছিল না, তাই তিনি লিখতে পেরেছিলেন- ‘আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে...’। যদি তখনো বর্তমান সময়ের মতো ক্রিকেটের দাপট থাকত, তাহলে লেখাটা হতে পারত এমন- আমরা সবাই বোদ্ধা আমাদেরই খেলার জগতে...। তবে রবীন্দ্রনাথ লিখে যেতে না পারলেও আমরা কিন্তু অন্তত দেখে যেতে পারছি পরিস্থিতি কত ভয়াবহ। মানে দেশে কী পরিমাণ ক্রিকেট বোদ্ধা গজিয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে দুদিন আগে একজনকে বললাম, দেশে কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো ক্রিকেট বোদ্ধা গজিয়ে উঠেছে। আমার কথা শুনে ভদ্রলোক বললেন, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন শুধু গ্রামেই ক্রিকেট বোদ্ধাদের উৎপাত। শহরে নেই। আমি অবাক হয়ে বললাম, এসব আপনি কী বলছেন? আমি গ্রাম-শহরের কথা কখন বললাম? ভদ্রলোক বললেন, আপনি যে বলেছেন ব্যাঙের ছাতার মতো নাকি ক্রিকেট বোদ্ধা গজিয়ে উঠেছে, এটাই মূলত গ্রামকে নির্দেশ করে। কারণ, ব্যাঙের ছাতা সাধারণত গ্রামেই জন্মায়। শহরে দেখা যায় না বললেই চলে। আমি ভদ্রলোকের কথার গভীরতা বুঝতে পেরে বললাম, তাহলে কথাটা কেমন হওয়া উচিত? ভদ্রলোক বললেন, কথাটা হওয়া উচিত এমন, দেশে কাপড়ে তৈরি ডান্ডিওয়ালা ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ক্রিকেট বোদ্ধা। কথাটা এমন কেন হওয়া উচিত, বুঝতে পারছেন তো? কারণ, গ্রাম নেই শহর নেই, কাপড়ে তৈরি ডান্ডিওয়ালা ছাতা সব জায়গায়ই পাওয়া যায়, দেখা যায়।

গতকাল আমার এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ক্রিকেট বোদ্ধার বিষয়টি নিয়ে। যেহেতু এই ছোটভাই নিজেও একজন বোদ্ধা। ম্যাচের তিন দিন আগেই ফলাফল বলে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি তাকে খোঁচা মেরে বললাম, তোর মতো বোদ্ধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না, কদর হচ্ছে না, এটা সত্যিই দুঃখজনক। আমার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোটভাই বলল, একদম ঠিক বলেছেন ভাই। যে দেশে গুণীর কদর হয় না, সেই দেশে গুণী জন্মায় না। আমি এবার উল্টোদিকে হাঁটা দিলাম এটা বলে, কদর হয় না, তাতেই দেশে এত বোদ্ধা জন্মে গেছে? কদর হলে তো উপায় ছিল না।

আমার এক বড়ভাই বললেন, হয়তো ক্রিকেট সেভাবে দেখি না। তবে টুকটাক কিন্তু বুঝি। আর বুঝি বলেই আজকে বসে একটা বিশ্লেষণ করলাম। বিশ্লেষণ করে বের করে ফেলেছি এবারের বিশ্বকাপে কাপ জিততে যাচ্ছে কোন দেশ। আমি বললাম, আপনার কাছে কি আইসিসির প্রেসিডেন্টের মোবাইল নাম্বার আছে? বড় ভাই অবাক হয়ে বললেন, কেন? আমি বললাম, না, মানে আপনি যেহেতু বিশ্লেষণ করে বের করে ফেলেছেন কোন দেশ কাপটা জিততে যাচ্ছে, অতএব আইসিসির প্রেসিডেন্টকে একটু ফোন করে শুধু এটা বলতেন আরকি, কষ্ট করে আর খেলানো দরকার নেই। কারণ, ফলাফল পেয়ে গেছি। বিশ্লেষণে যে দেশের নাম উঠে এসেছে, সময়মতো সেই দেশকে কাপ পৌঁছে দেওয়া হবে। অবশ্যই কুরিয়ারের মাধ্যমে। কারণ, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠালে দেরি হতে পারে। আমার এক বন্ধু খেলা শুরুর আগেই দল ঘোষণা নিয়ে উত্তেজিত। ভুলে সামনে পড়ে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখেই বলল, এইটা কোনো কাজ করল? একটা স্পিনারকে বসিয়ে রাখল! আরে এই পিচে তো বল শুধু ঘুরবে। ঘাস দেখেছিস পিচে? মনে হচ্ছে মিরপুরের স্টেডিয়াম বিমানে দুবাই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোর কী মনে হয়? আমি পিঠ বাঁচাতে বললাম, খেলা তো এত বুঝি না। তবে তোর কথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে।

আমি খেলা একটু কম বুঝলেও আমার এক ভাবি কিন্তু ভালোই ক্রিকেট বিশ্লেষণ করেন। সেদিন তার স্বামী বলল, বুঝলেন এখন পর্যন্ত আপনার ভাবি যা যা বলেছে, সব খাপে খাপ মিলে গেছে। আমি বললাম, যেমন? প্রতিবেশী বললেন, যেমন ধরেন খেলা শুরু হওয়ার আগেই সে বলেছিল, এবারের বিশ^কাপে যে ভালো খেলবে না, সে বাদ পড়বে। তার কথা কিন্তু ঠিকই মিলে গেছে। ‘পাপিয়া নিউগিনি’ বাদ পড়ে নাই? পড়েছে কিন্তু। আমি বললাম, কথা সত্য। তবে ‘পাপিয়া নিউগিনি’ না। পাপুয়া নিউগিনি। প্রতিবেশী বললেন, এই আরকি। তো আপনার ভাবি আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। বলেছিল, যে দল বাদ পড়বে, সে কোনোভাবেই সুপার টুয়েলভে খেলতে পারবে না। সত্যিই কিন্তু তাই হয়েছে। ‘পাপিয়া নিউগিনি’, সরি, পাপুয়া নিউগিনি কিন্তু সুপার টুয়েলভে খেলতে পারছে না। আপনি বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন জানি না, আমার কাছে কিন্তু মনে হচ্ছে, ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে আপনার ভাবির মূল্যায়ন হওয়া উচিত। আমি বললাম, মূল্যায়ন না হলে যদি উনি আপনার দিকে ফুলের টব বা এটা ওটা ছুড়ে মারে, তাহলে অবশ্যই মূল্যায়ন হওয়া উচিত। কারণ, জান বাঁচানো জরুরি। আর যদি ছুড়ে না মারে, তাহলে মূল্যায়নের দরকার নেই। কারণ, এই পদের বিশ্লে‘শক’ পুরো ক্রিকেট বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর