২২ জুন, ২০২২ ১১:২৪

গ্রামের বাড়ি বাড়ি বই ফেরি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গ্রামের বাড়ি বাড়ি বই ফেরি

কোমাল্লা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি গ্রাম। গ্রামে রয়েছে বিলকিছ আলম পাঠাগার। বীরচন্দ্র নগর, নোয়াপাড়া, যুগিরখীল, উজানমুড়ি ও আদর্শ গ্রাম। পাঠাগারের সদস্যরা এই ছয়টি গ্রামের বাড়ি বাড়ি বই নিয়ে যান। সেখানে পাঠক তার পছন্দ মতো বই রেখে দেন। পড়া শেষ হলে ফিরিয়ে দেন। ২০১৭ সালে পাঠাগারের যাত্রা। বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। এর পাঠক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক ও গৃহিনী। 

শুধু গল্প উপন্যাস নয়। নারীর মাতৃত্বকালীন জীবন-যাপন, কৃষকের চাষবাস ও জমি পরিমাপের বইও রয়েছে। পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা তরুণ লেখক ইমরান মাহফুজ। তার বাবা নুরুল আলম শিক্ষক ছিলেন। মাও বই প্রেমী। তাই তাদের নামে এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে পশ্চিম দিকে এক কিলোমিটার সামনে গেলে কোমাল্লা মসজিদ। মসজিদের সামনে আম গাছের ছায়ার নিচে বিলকিছ আলম পাঠাগার। ঘরে ১২/১৩ জন বই নিয়ে বসে পড়ছেন। কারো হাতে রবীন্দ্রনাথ, কারো হাতে নজরুলের বই। তবে গল্পের বইয়ের প্রতি বেশি আগ্রহ তাদের।  কেউ বই নিচ্ছেন কেউ ফেরত দিচ্ছেন।

পাঠাগারের দায়িত্বশীল আমিনুল ইসলাম বলেন, 'বই পড়ি নিজেকে জানি' স্লোগানে আমাদের যাত্রা। আমরা বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করি। এখন ১৫০ জনের বেশি পাঠক বই নেন। পাঠাগারে পড়তে আসেন ১৪/১৫জন। সাধারণত শুক্রবার বাড়িতে গিয়ে বইয়ের প্রচারণা চালাই।

কোমামল্লা গ্রামের সুমাইয়া আক্তার সোনাকাটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, বাড়ির পাশে পাঠাগার। এখান থেকে মজার মজার গল্পের বই সংগ্রহ করে পড়তে পারি।

পাঠাগারের দুইজন স্বেচ্ছাসেবক জিহাদুল ইসলাম ও কাজী মইনুদ্দিন বলেন, আমরা নিজেরা পড়ি এবং বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিই।

প্রতিষ্ঠাতা ইমরান মাহফুজ বলেন, আমি লেখালেখি করি। লেখালেখির কারণে মনে হয়েছে, কিছু পাঠক সৃষ্টি করা দরকার। সেই ইচ্ছে থেকে পাঠাগার শুরু করা। আগে অন্য বই পড়ে অভ্যাস হোক। পরে হয়তো আমার বইও পড়বে। সীমান্তবর্তী এই এলাকায় অন্ধকারে আমরা জোনাক পোকার মতো আলো জ্বালিয়েছি। এটা হয়তো এক সময় বড় আলোর মশাল হয়ে উঠবে। 

জেলা গ্রন্থাগারিক নাফিস সাদিক শিশির বলেন, গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে পাঠাগার স্থাপনের পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই ফেরি করা ব্যতিক্রম উদ্যোগ। ব্যক্তিগতভাবে তাদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। এটি গ্রামে ভালো সাড়া ফেলেছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সদ্য সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মনজুরুল হক বলেন, বিলকিছ আলম পাঠাগার বই বিমুখ শিক্ষার্থীদের বইমুখী করার চেষ্টা করছে। আমরা সাধ্য অনুযায়ী পাঠাগারের জন্য সহযোগিতা করেছি। শুভ উদ্যোগগুলো বেঁচে থাকুক।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর