২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৮:১৭

নুড়ি পাথর তুলে জীবন চলে তাদের

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

নুড়ি পাথর তুলে জীবন চলে তাদের

ভোগাই নদীতে বালু খুড়ে নুড়ি পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করছে একদল অভাবী মানুষ। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া মন্ডলিয়া পাড়া ইউনিয়নের পানিহাটা তারানি এলাকায় পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।

এ অঞ্চলে বেশকিছু পাথর শ্রমিক তাদের জীবিকার তাগিদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর ঠাণ্ডা পানিতে বালি গর্ত করে নুড়ি পাথর তুলেন। প্রচণ্ড শীতেও জীবিকার তাগিদে তাদের বাধ্য হয়ে নামতে হয় শীতল পানিতে। সারাদিনের উত্তোলিত পাথর মহাজনের কাছে বিক্রি করে চলে সংসার। এ যেন বরফ জলে জীবিকার লড়াই। 

ভারত-বাংলাদেশের দুই সীমান্তের বুক চিরে প্রবাহিত ভোগাই নদীতে এখানকার শ্রমিকের জীবিকার ভান্ডার। কেউ কেউ আশির্বাদও মনে করেন ভোগাই নদীকে। প্রতিদিন শত শত সিএফটি নুড়ি পাথর তোলা হচ্ছে এ নদী থেকে। ভোর সকালে বরফগলা ঠাণ্ডা পানিতেই শ্রমিকরা প্রতিদিন দলবেঁধে নদীতে আসে। সঙ্গে থাকে লোহার জাকলা, চালুনি ঝুড়ি, কোদাল। দিনভর চলে পাথর উত্তোলন। সে পাথর সংগ্রহ করে নদীর কিনারে এনে সেখান থেকে নদী তীরে স্তুপ করা হয়। সারা দিনে একজন শ্রমিক গড়ে ২০-২৫ সিএফটি পাথর তুলতে পারেন। কখনো কম হয়। সন্ধ্যায় মহাজনের কাছে বিক্রি করে গড়ে হাতে পান ২৫০-৩৫০ টাকা।

তারা প্রথমে নদীর বালুর চড়ে গর্ত করে। সেখানে বালুমিশ্রিত পাথর প্রথমে জালিতে তুলে ও জলে ছেঁকে বালু থেকে আলাদা করে স্তুপ করে রাখে। পরে তা ট্রলিতে লোড করে স্থানীয় পাথর মহাজনদের কাছে বিক্রি করেন। এই নুড়ি পাথর স্থানীয় বাজারে সিমেন্টের খুটি, ঘরের মেঝে পাকা করতে ব্যবহার করা হয়। 

ভোগাইয়ের এই পাথরের সাথে মিশে গেছেন নারীরাও। তারাও খুঁজে নিয়েছেন নতুন কর্মসংস্থান। ভোর হলেই গৃহের কাজকর্ম সেরে স্বামী সন্তানদের খাইয়ে বের হয়ে যান কাজে। সারাদিন গাঁধার খাটুনি শেষে এসব নারী শ্রমিকের আঁচলে আসে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার উৎস। 

তারানী গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমগর কোন জমি নাই, সরকারী খাস জমিতে থাহি।  স্বামী কামাল হোসেনরে নিয়া সারাদিন নুড়ি পাত্তর তুলি। এই দিয়ে আমগর সংসার চলে কোনো মতে। এর মধ্যে দুইডা সন্তান তাদেরও পড়া লেহার খরচ করুন লাগে। বড় ছেলেডা  নবম শ্রেণীতে ও মেয়েডা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ালেহা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাই এই ভোগাই নদীডাই আমাগরে বাঁচাই রাখছে। পানিখানা বরফের মতো ঠান্ডা ভাই। কাম না করলে খামু কী।’

তারানী গ্রামের ইব্রাহিম খলিল নামের আরেক শ্রমিক জানান, ঘরে স্ত্রীসহ পাঁচ ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজ করে। সন্তানের পড়া-লেখা ও ভরণপোষণ চলে এই পাথর জীবিকার ওপর। দিনভর দলের সঙ্গে ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলে তা বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেন। এত ঠান্ডা পানিতে কাজ করছেন, অসুখ হয় না? প্রশ্ন করলে মনির নামের আরেক শ্রমিক জানান, ‘হ্যাঁ ভাই, সর্দি-জ্বর তো হয়ই। কয়দিন জ্বরে পড়ে ছিলাম। কাম না করে উপায় নাই।’


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর