২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:০৫

চট্টগ্রামে বাড়ছে সরিষার চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বাড়ছে সরিষার চাষ

বাজারে বেড়েছে আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেলের দাম। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য সরিষা চাষে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ফলে অল্প খরচে ভালো লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। 

যার কারণে দিন দিন চট্টগ্রামে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ফলে গত বছরের চাইতে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরিষা আবাদ চোখে পড়ার মতো! হলুদ রঙের সরিষা ফুল পর্যটকদেরও দৃষ্টি কাড়ে!

গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরের দুই থানা মিলে প্রায় ২৪শ হেক্টর জমিতে হয়েছে সরিষা চাষ। ২০২৬ সালে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গত বছর শুধুমাত্র সাতশ’ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। চলতি বছরে সরিষা চাষ হয়েছে ২৩শ’ ৪২ হেক্টর জমিতে, যদিও আমাদের  লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ শ হেক্টর। এক সময় চট্টগ্রামে কোন সরিষা চাষই হতো না, তবে এখন সরকারি প্রণোদনাসহ তেলের দাম বাড়াতে কৃষকও ভালো লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকছে। আগামী ২০২৪ সালে ৬ হাজার ও ২০২৬ সালে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র- বারীর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সামছুর রহমান বলেন, সরিষা চাষাবাদ যদি আরো বেশি প্রচারণার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে আমদানি নির্ভর তেলের সংকট দূর করা সম্ভব হবে। বোরো ও আমনের মাঝামাছি সময়ে কৃষক বারী সরিষা-১৪, ১৫ ও ১৭ বীজ রোপন করলে প্রতি বিঘায় ৬ মণ সরিষা পাওয়া যাবে এবং বারী সরিষা-১৮ চাষ করলে প্রতি বিঘায় ৮ মণ সরিষা পাওয়া যাবে। তবে বারী-১৮ চাষাবাদে সময় লাগে, যার কারণে অনেকে আমন না হওয়ার ভয়ে চাষ করেন না। তবে আমন দেরিতে করলেও সমস্যা হবে না। কৃষককে এ ভয় দূর করে বারী-১৮ চাষের পরামর্শ দেন তিনি।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র চট্টগ্রামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জামাল উদ্দীন বলেন, শুধু হাটহাজারী ৪৪২ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এটা ব্যাপক আকারে চাষাবাদ করলে, অনাবাদী জমিও আবাদী জমিতে রূপান্তর করা যাবে। দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করার জন্য সরিষা চাষ করা সম্ভব। 

চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চট্টগ্রামে সরিষা চাষের বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৪শ হেক্টর। আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ২৩শ ৪২ হেক্টর জমিতে। যার কারণে কৃষি বিভাগও আগামীতে এই খাতে প্রচুর সম্ভাবনা দেখছেন। চট্টগ্রামের উপজেলার মধ্যে মীরসরাই উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫০ হেক্টর জমিতে, তবে আবাদ হয়েছে ৩২০ হেক্টর জমিতে। সীতাকুণ্ড উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৭০ হেক্টর। ফটিকছড়িতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ২৫২ হেক্টর। হাটহাজারীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২০ হেক্টর, সেখানে হয়েছে ৪৪২ হেক্টর জমি। রাউজানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩শ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে। রাঙ্গুনিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩শ, আবাদ হয়েছে ২২০ হেক্টর। বোয়ালখালীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১শ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর। পটিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১শ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৭২ হেক্টর। কর্নফুলীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর। আনোয়ারায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৯২ হেক্টর। চন্দনাইশে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৫২ হেক্টর। লোহাগাড়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১শ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৯২ হেক্টর। সাতকানিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১০৮ হেক্টর। বাঁশখালীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর ও সন্দ্বীপ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর ও আবাদ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে। পাশাপাশি সিটি এলাকার পাঁচলাইশ ও পতেঙ্গা এলাকায় ২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর