১৮ মার্চ, ২০২৩ ২১:৩৫

কোটি টাকার পুরাতন অচল শ্যালো মেশিনের বাজার বগুড়ায়

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

কোটি টাকার পুরাতন অচল শ্যালো মেশিনের বাজার বগুড়ায়

বগুড়ায় পুরাতন ও অচল শ্যালো মেশিন, পাওয়ার টিলার কেনাবেচার বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতি মাসে হাজার হাজার মেশিন কেনাবেচা হচ্ছে এই বাজারে। পুরাতন এই মেশিনের পার্টস গলিয়ে তা থেকে তৈরি হচ্ছে নুতন নতুন পণ্য। এই তৈরিকৃত পণ্যই আবার ব্যবহার হচ্ছে দেশের কৃষি কাজে। ধীরে ধীরে এই বাজার এখন কোটি টাকার বাজারে পরিণত হয়েছে। 

আর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে শতশত শ্রমিক। ভাঙাড়ি লোহা দিয়ে তৈরি করার ফলে বিদেশ থেকে নতুন করে লোহা আমদানি কম করতে হচ্ছে। আর স্থানীয় অর্থনীতির চাকা শক্ত হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা বলছেন।

জানা যায়, স্বাধীনতার আগে থেকে বগুড়ায় বিভিন্ন রকমের যন্ত্রাংশের খুচরা পার্টস তৈরি হতে থাকে। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বিসিক শিল্প ও কাটনারপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় এই পার্টস তৈরি করতো কয়েকজন ওয়ার্কসপ মালিক শ্রমিক। উত্তরের জেলাগুলো কৃষি ভিত্তিক হওয়ার কারণে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার পর এই শিল্পের বিকাশ এতটায় হয়েছে যে এখন সেটি বগুড়ার সবচেয়ে বড় শিল্প কারখানায় রুপান্তরিত হয়েছে। এই শিল্পের কাঁচামাল হলো পুরাতন লোহা, বাসা বাড়িতে ভাঙ্গা তৈজসপত্র, ছাদ ঢালাইয়ে ব্যবহৃত পুরাতন রড, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির বিভিন্ন লোহজাতীয় পার্টস, টিউবওয়েল, লেদ ওয়ার্কসপের ফেলনা লোহার টুকরো, জাহাজ ভাঙ্গার লোহা। এসব সংগৃহীত লোহা গলিয়ে আবারও তৈরী করা হয় শ্যালো মেশিন, পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন কারখানার যন্ত্রাংশ। কৃষির জন্য ব্যবহৃত ফলা, শ্যালো মেশিনের পার্টস, পানিসেচের জন্য যন্ত্রাংশসহ কৃষিকাজের বিভিন্ন পার্টস তৈরি। বগুড়ায় তৈরি হওয়া এই পার্টস উত্তরেরর ১৬ জেলাসহ বরিশাল, টাঙ্গাইল, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় বিক্রি হয়। আবার বিভিন্ন জেলা থেকেই পুরাতন ভাঙাড়ি লোহা, ঢালাই এর লোহা সংগ্রহ করা হয়। লোহার সংকট সৃষ্টি হলে জাহাজ ভাঙ্গা ও পুরাতন লোহা কেজি দরে কিনে কাজ চলতো। এরপর পুরাতন ও অচল শ্যালো মেশিন, পাওয়ার টিলার ক্রয় করে সেখান থেকে লোহা সংগ্রহ করা হয়। লোহা সংগ্রহের এই বাজার গড়ে উঠেছে শহরের পাশে শাপলা সুপার মার্কেটে।

শাপলা সুপার মার্কেটের পুরাতন ও অচল শ্যালো মেশিনের ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বরিশাল, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে পুরাতন ও অচল শ্যালো মেশিন ক্রয় করা হয়। এই মেশিনগুলো পার্টস বাই পার্টস খোলা হয়। খোলার পরে যে পার্টসগুলো সচল থাকে সেগুলো ওভাবেই বিক্রি হয়ে থাকে। আর অচল পার্টসগুলো লোহা হিসেবে কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। মান অনুযায়ী অচল বা পুরাতন শ্যালো মেশিন বিক্রি হয়ে থাকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকায়। আবার পুরাতন ১২ হর্সপাওয়ার মেশিন বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার মেশিন কেনাবেচা হয়। আর মেশিন থেকে পাওয়া লোহা ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি, ঢালাই ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি, এলাই ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। গড়ে প্রতিটি মেশিন ৬ হাজার টাকা ধরলে শুধু দেড় হাজার মেশিনের দামই পড়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকা। আর এর সঙ্গে পুরাতন লোহার যোগ হলে কোটি টাকার বাজার ছাড়িয়ে যায়। 
বগুড়ার ভাঙারি ব্যবসায়ী ও ওয়ার্কসপ শ্রমিক মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক শ্রেণির ভাঙাড়ি লোহার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উপায়ে এই লোহা উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে। সংগ্রহের পর বগুড়ার বিসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ৩০ টি ঢালাই কারখানার মালিকদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে। কয়েক হাজার পরিবার এর সাথে জড়িয়ে আছে।

বগুড়া শহরের বিসিক শিল্পীনগরীর প্রতিষ্ঠান গুঞ্জন মেটাল ওয়ার্কসপ সূত্রে জানা যায়, পূর্বে ব্যবহৃত বা পুরাতন লোহা ক্রয় করা হয় বাজার দরে। বর্তমান বাজারে পুরাতন লোহা ৬২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই পুরাতন লোহা গলানো হয় সিলিকন, পিগআয়রন ও হার্ডকোক দিয়ে। গলানোর পর তা বিভিন্ন সাচে ঢেলে দিয়ে একটি আকৃতি তৈরী করা হয়।

বগুড়া শহরের রেলওয়ে কৃষিপণ্যের মার্কেটের বসাক ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিশ্বজিৎ বসাক জানান, ঢালাই কারাখানায় পুরাতন লোহা গলানোর পর সাচে দিয়ে জমানো হয়। সেই জমানো লোহাকে তারা লেদ বা ওয়ার্কসপে ফিনিশিং দিয়ে থাকেন। তিনি জানান, বগুড়ায় তৈরী কৃষিপণ্য তৈরী হয় পুরাতন লোহা গলিয়ে।

পুরাতন মেশিন সংগ্রহকারি আসাদুর রহমান খোকন জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে পুরাতন শ্যালো মেশিন সংগ্রহ করা হয়। ভাঙাড়ি শ্যালো মেশিনও সংগ্রহ করা হয়। এসবের মধ্যে থেকে যে সব পার্টস ভাল থাকে তা পুরাতন যন্ত্রের দোকানে বিক্রি করা হয়। এবং বাকি ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি হয়। এই ভাঙাড়ি লোহা পরে কেজি হিসেবে বিক্রি হয় বিসিক শিল্প মালিকদের কাছে। যা তারা গলিয়ে নতুন করে বিভিন্ন কিছু তৈরি করে। প্রতি মাসে এই মার্কেটে কমপক্ষে ১০০০ থেকে ১২০০ মেশিন এর কেনাবেচা হয়। এই মার্কেটের আশে পাশে আরো কিছু মার্কেট গড়ে উঠেছে সেখানেও কিছু কিছু পুরাতন মেশিন কেনা বেচা হয়। মেশিন এর মান অনুযায়ী কেনাবেচা হয়। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর