গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা দুই মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পেলেও এখনই তার মুক্তি মিলছে না। এ দুই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আপিল না করলেও অন্তত আরও দুই মামলায় জামিন নিতে হবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে। আর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে সেই আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হবে তাকে। গতকাল দুই মামলায় জামিনের পর দুই পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির মামলা দুটিতে বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। একই সঙ্গে মামলা দুটিতে খালেদা জিয়াকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে। গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুর রহমান খান।
আদেশের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। কিন্তু নিম্ন আদালত জামিন না দেওয়ায় আমরা হাই কোর্টে এসেছিলাম। হাই কোর্ট দুই মামলায় ছয় মাস করে জামিন দিয়েছে।’ তিনি বলেন, এ মামলা দুটিতে জামিন হলেও বিএনপি চেয়ারপাসরন এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পাওয়ার পরই তার মুক্তির পথ তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন। খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী এহসানুর রহমান জানান, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা মামলা দুটিতে আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে। এখন রাষ্ট্রপক্ষ যদি জামিনের বিরুদ্ধে আপিল না করে তাহলে বাকি মামলা দুটিতে জামিন পেলেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে মুক্তির বিষয়টি আবারও ঝুলে যাবে।’এদিকে এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে ভাবছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুর রহমান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন বিষয়টি পর্যালোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’ ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। আসলে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে। হিন্দুদের ওপর হামলা করেছে।’ খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে অভিযোগ করে ওই বছরের ২১ অক্টোবর জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী বাদী হয়ে মামলা করেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালতে যে মানহানির মামলা হয়, তার বাদীও এ বি সিদ্দিকী। দুই মামলাতেই গত বছরের ৩০ জুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। দুই তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২০ মার্চ খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করে আদালত। এরপর খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
মুক্তিতে বাধা যে দুই মামলা : বিএনপি চেয়ারপাসরনের বিরুদ্ধে থাকা ৩৬ মামলার মধ্যে গতকাল দুটিতে জামিন পাওয়ার পর তার মুক্তিতে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। এ মামলা দুটিতে দ-িত হয়ে তিনি এখন কারাভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিনও চাওয়া হয়েছে। আর জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ও অর্থদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার পাঁচটিতে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সেগুলো হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। এ পাঁচটি মামলাই সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে (এক-এগারোর সময়) করা। আর বাকিগুলো হরতাল, অবরোধে নাশকতার মাধ্যমে মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন ও ঋণখেলাপির অভিযোগে বর্তমান সরকারের সময়ে করা হয়েছে।