মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইসি ভবনে আগুন

নিজস্ব নির্বাপণব্যবস্থা কাজ করেনি, প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন ভবনের বেইজমেন্টে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকা- ঘটেছে। এতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) অন্তত দুই ডজন যন্ত্রাংশ, চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক ক্যাবল পুড়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বড় ধরনের অগ্নিকা  ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে এবার রক্ষা পেলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ ভবনে আগামীতে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ নেবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এদিকে অত্যাধুনিক এই ভবনের সবখানে ফায়ার অ্যালার্ম রয়েছে। প্রতিতলায় অগ্নিনির্বাপণের ফায়ার হাইড্রেন্ট রয়েছে। আগুন লাগলে কোথাও কোথাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর (ফায়ার ¯িপ্রংকলার) ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু তা কাজ করেনি। ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে এ কথা জানান। রাত ১১টার পর আগুনের ঘটনা ঘটায় দমকল বাহিনীর লোকজন এসেও অগ্নিকান্ডের জায়গায় দ্রুত প্রবেশ করতে পারেনি। দুই প্রধান দরজা তালাবদ্ধ থাকায় বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলেছেন- অগ্নিনির্বাপণে ইসির নিজস্ব ব্যবস্থা কোনো কাজে আসেনি। আমরা এসে তাদের কোনো কার্যক্রম দেখিনি।

রবিবার রাত ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অগ্নিকা  ঘটে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, ভবনের বেইজমেন্টের আগুন নেভানো হয়।

১২ তলা ভবনে ভোটারদের ডেটাবেইজের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ১১ তলায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কক্ষ রয়েছে; গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। ভবনের নিচতলায় ইভিএম সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড সংরক্ষণ ও মুদ্রণ যন্ত্র এ ভবনে রাখার পরিকল্পনা ছিল। এমন স্পর্শকাতর স্থাপনায় অগ্নিকান্ডে  আশঙ্কার চেয়ে খুবই সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলে জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। অগ্নিকান্ডে র ঘটনা তদন্তে ইসি গঠিত কমিটির সদস্যও তিনি। অগ্নিকান্ডে র কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে এনআইডি উইং মহাপরিচালক বলেন, শর্ট সার্কিট থেকে এ আগুণের সূত্রপাত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি। ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার তুলনায় খুবই সামান্য। ৫০-৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ইভিএমের ১৫-২০টি ব্যালট ইউনিট; ২৫-৩০টি মনিটর, ৪টি এসি ও বৈদ্যুতিক ক্যাবলের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করা হবে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। দমকল বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মহাপরিচালক।

ঘাটতি ছিল : ১১টার পর নির্বাচন ভবনে আগুন লাগলেও বেইজমেন্ট থেকে ধোঁয়া আসার পরই সংশ্লিষ্টরা তা টের পেয়েছেন। ফায়ার অ্যালার্ম কাজ করেছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়নি। সেই সঙ্গে বেইজমেন্টে অগ্নিনির্বাপণে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছিল কিনা তাও বলছেন না কেউই। বেইজমেন্টের যে বদ্ধ কক্ষে অগ্নিকান্ডে র সূত্রপাত হয়েছে তা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা ছিল না। ইতিমধ্যে নির্বাচন ভবনে অগ্নিকান্ডে  করণীয় বিষয়ে মহড়াও হয়েছে। সেক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে কাজ হয়েছে। তবে ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সচল রয়েছে কিনা তা তদারকি করা হয়েছে কম। অত্যাধুনিক ভবনের নিচতলায় মিলনায়তন রয়েছে। ভবনের সবখানে ফায়ার অ্যালার্ম রয়েছে। প্রতি তলায় অগ্নিনির্বাপণের ফায়ার হাইড্রেন্ট রয়েছে। আগুন লাগলে কোথাও কোথাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর (ফায়ার স্প্রিংকলার) ব্যবস্থাও রয়েছে। ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে জানান, ফায়ার অ্যালার্ম ও তাৎক্ষণিকভাবে স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানো যন্ত্র কাজ করেনি। রাত ১১টার পর অগ্নিকা  ঘটায় দমকল বাহিনীর লোকজন এসেও অগ্নিকান্ডে র জায়গায় দ্রুত প্রবেশ করতে পারেনি। দুই প্রধান দরজা তালাবদ্ধ থাকায় বিলম্ব হয়েছে। অন্যপ্রান্তে কাচ ভেঙে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বেইজমেন্টে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ছিল কিনা বা থাকলে কাজ করেছে কিনা সে বিষয়টি তদন্তে উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাতে ঘটনাটি হয়েছে। বেইজমেন্টের ওই জায়গায় তো কেউ থাকে না। দমকল বাহিনীর আসার আগে ফায়ার অ্যালার্ম ও সেখানকার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কাজ করেছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। আমরা সব বিষয়ই তদন্তে তুলে আনব।

আগামীতে এ ভবনের স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করেন এনআইডি উইং মহাপরিচালক। আমরা অটো জেনারেডেট সিস্টেম ডেভেলপ করব। কী ব্যবস্থা ছিল তা বিস্তারিত জানি না। আগামীতে এমন সিস্টেম করব যাতে ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে। অগ্নিনির্বাপণের বিষয়ে সতর্কতামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির সভা মঙ্গলবার : নির্বাচন ভবনে অগ্নিকান্ডে র ঘটনা তদন্তের জন্য ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান কমিটির সভাপতি, সহকারী সচিব (সেবা-২) খ ম আরিফুল ইসলাম সদস্য সচিব, এ ছাড়া চারজন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, গণপূর্তের ই/এম বিভাগ-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম, গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ ইয়ামিন-উল-ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের প্রতিনিধি (পরিচালকের নিম্নে নয়)। এই কমিটিকে তিনটি বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকা  সংঘটিত হওয়ার কারণ ও উৎস নির্ণয়; অগ্নিকান্ডে র ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ (আর্থিক মূল্যসহ) এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অগ্নিকা  যাতে না ঘটে সে সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন। সোমবার ইসির উপসচিব (সাধারণ সেবা) রাশেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। মঙ্গলবার  বেলা ১১টায় তদন্ত কমিটির প্রথম সভা হবে।

গুরুত্বপূর্ণ নথিও ছিল না : দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে এনআইডি ডিজি সাইদুল ইসলাম জানান, বেইজমেন্টে যেভানে অগ্নিকা  ঘটেছে সেখানে কোনো কাগজপত্র ছিল না। তিনি জানান, কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট পুড়েনি। তবে আমরা আশঙ্কা করছি যে, পানিতে ব্যালটগুলো নষ্ট হতে পারে, তবে তা যেন না হয়। এজন্য আমরা সুপারিশগুলো কমিশনকে জানাব। তিনি বলেন, ‘পয়েন্ট অব ফায়ার যেটা দেখলাম মেইনলি ক্যাবলের দিকে ফায়ারটা ছড়িয়েছে। যার জন্য ওপরের ক্যাবলগুলো পুড়ে গেছে। যে এসিগুলো ছিল সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্যাবলের বক্সগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেইজমেন্টে যেহেতু কেউ থাকে না, সেখানে কোনো হিটার নেই। কাজেই বিদ্যুৎ ছাড়া অন্য কিছু তো দেখছি না।’

সর্বশেষ খবর