মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দুই দলের রাজনীতিতে দুই চিত্র

ছাত্রদলেই ব্যতিব্যস্ত বিএনপি নীতিনির্ধারকরা

সাংগঠনিক সব কাজই বন্ধ প্রায়

মাহমুদ আজহার

বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে দলের সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিয়েই ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। তারপরও এখন পর্যন্ত সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা যায়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সাময়িকভাবে স্থগিত আছে। কবে সম্মেলন হবে তাও স্পষ্ট নয়।

ছাত্রদলের কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে হাত দিতে পারছে না বিএনপি। অন্য অঙ্গ-সংগঠনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও বন্ধ। বিএনপির ভিতরে-বাইরে জাতীয় কাউন্সিল করা নিয়ে কথাবার্তা চললেও এ বছর কাউন্সিল হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক প্রায় সব কর্মকা ই এখন বন্ধ প্রায়।

সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেওয়ার সময় ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর শাখার নেতা বজলুল বাসিত আঞ্জু লাঞ্ছিত হন। ওই ঘটনারও বিচার হচ্ছে না ছাত্রদলকে নিয়ে নেতাদের ব্যস্ততার কারণে। 

সম্প্রতি কয়েকদফা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, ওই বৈঠকগুলোয় আলোচিত বিষয় ছিল ছাত্রদল ইস্যু। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার স্থায়ী কমিটি, দল সমর্থিত আইনজীবী ও সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানেও আলোচনার মূল বিষয় ছিল ছাত্রদল। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী করণীয় নিয়ে নেতারা নিজেদের মতামত দেন। এ ব্যাপারে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির আইনজীবী নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সারা দেশেই নেতা-কর্মীদের মুখে ছাত্রদলের কাউন্সিল ইস্যুটিই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘এ সংগঠনটির কাউন্সিল স্থগিত হওয়ার পর আমরা আইনগতভাবে নানা বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করছি। আশা করি, শিগগিরই ছাত্রদলের কাউন্সিল হবে। এ নিয়ে অভিভাবক হিসেবে বিএনপি এখন কিছুটা ব্যস্ত সময় পাড় করছে।’  জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরগরম। সংগঠনটির সম্মেলন স্থগিতের আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে। প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্তসহ নানা অঙ্গীকার নিয়ে নয়াপল্টন অফিসের সামনে তারা লিফলেট বিতরণ করে। কাউন্সিলকে সফল করতে সাবেক ছাত্রনেতারা (এখন সবাই বিএনপির নেতা) নয়াপল্টনের দ্বিতীয়তলায় ব্যস্ত সময় কাটান। বিভিন্ন জেলা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মুখে আলোচনায় ছিল ছাত্রদল। জেলা পর্যায়ে ছাত্রদলের প্রার্থীরা গিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোট চান। কেন্দ্রীয় কাউন্সিল স্থগিতের পর থেকেও নয়াপল্টনে প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে। ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী- সমর্থকদের নিয়ে এ মিছিল করছেন।

যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি হচ্ছে না : ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী যুবদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার পর এই পর্যন্ত আর কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। প্রায় আড়াই বছর হতে চলল পাঁচ সদস্যের কমিটিতেই মেয়াদ পার করছে বিএনপির ‘প্রাণশক্তি’ বলে খ্যাত যুবদল। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। 

কমিটি না করার যুক্তি হিসেবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের  নেতারা বলছেন, বিরোধী দলে থাকলে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। বিশেষ করে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের এই মেয়াদের আগে ও পরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ঘরেই থাকতে পারেননি। তা ছাড়া প্রায় ১৮ মাস ধরে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ কারণেই কমিটির কার্যক্রম দীর্ঘ সময় স্থবির ছিল। এরপর ছাত্রদলের কাউন্সিলকে ঘিরে সবারই ব্যস্ততা সেদিকে। হঠাৎই ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বিএনপিসহ সব অঙ্গ সংগঠনের পুনর্গঠন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কমিটির জন্য প্রস্তুত। ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পরই আমরা আশা করছি যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারব।’

সর্বশেষ খবর