মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
আইএফসির প্রতিবেদন

টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি বলে মনে করে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসি। সংস্থাটি বলছে, এটি করা সম্ভব হলে একদিকে এক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে মোট রপ্তানি আয় বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। উপকৃত হবে নারীরাও। তবে এজন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে নতুন কারখানা স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদি তহবিল, করছাড়, প্রণোদনাসহ অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে। এ ছাড়া বাজেটে আলাদা করে ১০০ কোটি ডলার রাখার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ‘বিল্ডিং কমপিটিটিভ সেক্টরস ফর এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন : অপরচুনিটিস অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিস ফর বাংলাদেশ’ নামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে আইএফসির গবেষণার ফলাফল উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুল আজম প্রমুখ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৬০০ ধরনের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে তৈরি পোশাকের ২৯২ ধরনের পণ্য থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগ আসে। বাকি ১ হাজার ৩ শতাধিক পণ্য থেকে আসে মাত্র ১৫ শতাংশ। কিন্তু এই ১ হাজার ৩ শতাধিক পণ্যের মধ্যে প্রচুর পণ্য রয়েছে, যেগুলোর বাজার অনেক বড় এবং প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য ও ওষুধের বাজার বড় হচ্ছে। এসব খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ফলে সরকারের যথাযথ নীতিসহায়তা পেলে এসব খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই বছরে ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই সময়ে ২০ লাখের বেশি মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় ১৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে আটকে আছে; যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম। এটি গত বছরের রপ্তানির তুলনায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম। অনুষ্ঠানে ড. মসিউর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি স্থিতিশীল গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, রপ্তানি খাতে করহার, কর আদায় পদ্ধতি ও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হওয়া উচিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগ রয়েছে। আবার গবেষণায়ও জোর দিতে হবে, যাতে নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা যায়। আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার বলেন, চামড়া ও পাদুকা, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল শিল্প বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ করে দিতে পারে। এজন্য সরকারকে নীতিগত কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে এগোনো যাবে না। রপ্তানির অন্যান্য খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।

বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বলেন, পণ্য বহুমুখীকরণ জরুরি। তবে এর ধরন পাল্টাতে হবে। লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ভিয়েতনামের নিজস্ব চামড়া নেই। আবার জনসংখ্যাও কম। কিন্তু ভিয়েতনাম বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব চামড়া ও পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলার।

প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। এজন্য সরকারের নীতিসহায়তা বাড়াতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর