শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নারীকে বিবস্ত্র নির্যাতনে স্বামী-ভাশুরও জড়িত

অবহেলা চেয়ারম্যান মেম্বার ওসির হাই কোর্টে প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনের অবহেলা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় নারীর স্বামী ও ভাশুরের সম্পৃক্ততা ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন দেখে প্রধান অভিযুক্ত দেলোয়ারের বিষয়ে হাই কোর্ট বলেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সে এ ক্ষমতা পেয়েছে। সুন্দর প্রতিবেদনের জন্য অনুসন্ধান কমিটিকে ধন্যবাদ জানায় আদালত। এ ছাড়া এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর দিন ঠিক করেছে হাই কোর্ট। এর আগে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত এ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এ ছাড়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে হাই কোর্টকে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ওই ভিডিও ফুটেজটির একটি কপি সংরক্ষণ করেছে বিটিআরসি।

অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় চৌকিদার, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) অবহেলা ছিল এ ঘটনায়। অবহেলার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনায়নকারী আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আবদুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। এর আগে গত ৫ অক্টোবর ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছে আদালত। আদালতের নির্দেশে গঠিত এ কমিটিতে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা সমাজসেবা অফিসার এবং চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ। প্রতিবেদনটির বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন ওই নারীর স্বামীকে বেঁধে রাখার বিষয়টি প্রচার হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে সেই নারীর স্বামী ও ভাসুরের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া প্রতিবেদনে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অবহেলা পাওয়া গেছে। তাই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। গত মাসের ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর (৩৫) বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানি করে স্থানীয় বাদল ও তার সংঘবদ্ধ বখাটে দল। ওই সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর ও মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করে। ৪ অক্টোবর দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২ দিন পর গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে তা ভাইরাল হয়। এতে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর