শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

জিয়া আমাকে পাঁচ বছর দেশে আসতে দেয়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জিয়া আমাকে পাঁচ বছর দেশে আসতে দেয়নি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ স্বাধীন করেছেন। ’৭৫ সালে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। আমি ও ছোট বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে যাই। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান আমাকে পাঁচ বছর দেশে আসতে দেয়নি।

গতকাল দেশের পাঁচটি বিভাগের আওতাধীন ২০টি জেলার ৭০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’-এর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে অংশ নেন।       

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার সোনার বাংলা গঠনে হাত দিই। তখন সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করি। ফলে গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পায়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, তারা আমার প্রতি আস্থা রেখে বারবার ক্ষমতায় এনেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ শুরু করি।

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করি। কমিউনিটি ভিশন সেন্টার তারই একটি। এর মাধ্যমে চক্ষু সেবা সারা দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় চালু করা হবে এই সেন্টার। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে অনলাইনে সেবা গ্রহণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছে জনগণ। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু আজকে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক ধাপ উপরে উঠে এসেছি। টানা ক্ষমতায় থাকার ফলেই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে হলে দরকার সুস্থ মানুষ। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণ সেবা পাচ্ছে। প্রান্তিক মানুষ যাতে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা পায় সে জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে। টিকা নেওয়ার সময় অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব উপজেলায় আমরা চক্ষু চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেব। আওয়ামী লীগ সরকার আধুনিকায়নের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে। আরও ১১০টি ভিশন কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনের বিষয়ে চিন্তা করছি। সে পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি। চক্ষু রোগীদের চোখে ছানি পড়া, গ্লুকোমা বা ডায়াবেটিস, রেটিনোপ্যাথি বা শিশুর চোখে আঘাতজনিত চিকিৎসা, পাওয়ার চশমার ব্যবস্থাপনা সরকারিভাবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রায় ৫ কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক চক্ষু সেবার আওতায় আনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অন্ধজনে আলো দেওয়ার চেয়ে বড় কাজ হতে পারে না। অন্ধত্ব মানুষের জীবনকে অর্থহীন করে তোলে। এই চিকিৎসার ফলে তারা সুস্থ হবেন। দেখতে পাবেন। জীবন হবে অর্থবহ। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা সেবাটা দিচ্ছি। ভারতের চক্ষু হাসপাতাল চেইন অরবিন্দ হাসপাতালের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তাদের পরামর্শও আমাদের কাজে লাগছে। এ জন্য অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, আসলে চক্ষু চিকিৎসার অনেক খরচ। সাধারণ মানুষ এই খরচটা দিতে পারে না। কিন্তু তারা এ দেশের নাগরিক, তারা চিকিৎসা পাবেন না? আমি তো শুধু প্রধানমন্ত্রী না, আমি তো জাতির পিতার কন্যা। সেই হিসেবে আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্বই আমরা পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, জন্মান্ধতা দূর করার জন্য প্রসূতি মাকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছি। প্রসবের আগে ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হয়। যার কারণে এখন আমরা ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি। জন্মান্ধতা কমে গেছে। এ ছাড়া ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি, কৃমির ওষুধ দিচ্ছি, ডিপিটি, বিসিজিসহ বিভিন্ন টিকাগুলো দেওয়া হচ্ছে অর্থাৎ সার্বিকভাবে মানুষ যাতে সুস্থ থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে আমাদের দেশের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। যদিও টিকাদান শুরু হয়েছে। তারপরও আমি বলব মাস্ক পরে থাকা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কিছুক্ষণ পর পর ভালো করে হাত পরিষ্কার করার যে স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে তা মানতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কার্যক্রম বিষয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্রও পরিবেশিত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী রংপুরের পীরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

শ্বশুরবাড়ি বলে কথা : অনুষ্ঠানে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সুবিধাভোগী এক নারীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে হাস্যোজ্জ্বল ওই অঞ্চলের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা বলেন, শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। কাজেই একটু বেশি কথা শুনতেই হয়। করোনার ঝামেলা চলে গেলে আবার আসব। উপকারভোগী নারী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখানে কোনো চক্ষু চিকিৎসা সেবা ছিল না। এখন উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের ভিশন সেন্টারে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমি সেবা পেয়েছি। সরকারিভাবে ওষুধপত্র, ড্রপ ও চশমা পেয়েছি। আমার স্বামীরও চোখের সমস্যা ছিল। রংপুরে অপারেশন করে তার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সে এখন সুস্থ। আমরা ভালো আছি।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব খুশি হলাম যে আপনারা উপকার পাচ্ছেন। এতেই আমি খুশি, এতেই আমার আনন্দ। স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সময় সবাই সাবধানে থাকবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন। মাস্ক পরবেন। প্রধানমন্ত্রী ওই উপকারভোগীকে প্রশ্ন করেন আরও কিছু বলতে চান? জবাবে উপকারভোগী বলেন, হ্যাঁ বলতে চাই- আমাদের এখানে চক্ষু চিকিৎসার যেন আরও বেশি সুযোগ-সুুবিধা দেওয়া হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আমি সেই ব্যবস্থা করব। শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। একটু বেশি কথা শুনতেই হয়। এ সময় পীরগঞ্জ প্রান্তে উপস্থিত সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ কথায় হাততালি দেন। পীরগঞ্জ প্রান্তে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রাণী রায়।

সর্বশেষ খবর