বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

চাকরি হারিয়ে ফিরছেন প্রবাসীরা

পাঁচ মাসে এসেছেন ৩৬ হাজার, করোনার শুরু থেকে সংকট

জুলকার নাইন

চাকরি হারিয়ে ফিরছেন প্রবাসীরা

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৬ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ফেরত আসতে হয়েছে। প্রত্যেকেই ফিরেছেন আউটপাস নিয়ে। বেশির ভাগ ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কেউ করোনায় কাজ না থাকা বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আবার কেউ ভিসার মেয়াদ না থাকায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গত বছর করোনা মহামারীর শুরু থেকেই চলছিল সংকট।

প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুসারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আউটপাস নিয়ে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ২১০। পুরুষ ৩৪ হাজার ৯২ আর নারী ২ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১১ হাজার ৫৪৯ (পুরুষ ১ হাজার ১১৮, নারী ৩৬০), ফেব্রুয়ারিতে ৯ হাজার ২১৪ (পুরুষ ৮ হাজার ৯৬৮, নারী ২৪৬), মার্চে ৭ হাজার ৭৬৭ (পুরুষ ৭ হাজার ৪১৩, নারী ৩৫৪), এপ্রিলে ২ হাজার ৩৫৯ (পুরুষ ২ হাজার ১৩, নারী ৩৪৬), মেতে ৩ হাজার ৬০৫ (পুরুষ ৩ হাজার ১৭, নারী ৫৮৮) এবং ১৩ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৭১৬ জন (১ হাজার ৪৯২, নারী ২২৪) ফেরত আসেন।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, করোনা মহামারী দেখা দেওয়ার পর থেকেই জনশক্তি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশি কর্মীদের খারাপ সময় চলছে। ব্যাপক মাত্রায় সৌদিকরণের ফলে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) নবায়ন করতে না পেরে সৌদি আরবে অবৈধ হয়ে পড়েন বড়সংখ্যক প্রবাসী। অবৈধদের তালিকা দীর্ঘ হয় ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এমনকি কাতারেও। এ অবস্থায় চাকরি হারিয়ে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওমান, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ থেকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরতে বাধ্য হন অনেকে। কেউ কেউ অবৈধভাবে অবস্থান করতে গিয়ে ধরা পড়েন। কারাভোগ শেষে দূতাবাসের মাধ্যমে আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাদের। মূলত যাদের পাসপোর্ট নেই, অবৈধ কিংবা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে যারা একেবারে নিজ দেশে চলে যেতে ইচ্ছুক অথবা দেশে গিয়ে নতুন ভিসায় আবার বিদেশে আসতে চান তাদের জন্যই আউটপাস দেয় দূতাবাস। এ ছাড়া যেসব কর্মী দূতাবাসের সেইফ হাউসে হেফাজতে থাকেন এবং যাদের মামলা শেষ তাদেরও আউটপাস দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দূতাবাস। আউটপাস নিয়ে ফেরা প্রত্যেককেই প্রথমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের পাঠানো হয় বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে। সেখানে তথ্য সংগ্রহের পর তাদের বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়।

পাঁচ মাসে স্মার্টকার্ড নিয়ে গেছেন ২ লাখের বেশি : ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৮৫৫ জন কর্মী স্মার্টকার্ড নিয়ে বিদেশে গেছেন। পুরুষ ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৮ আর নারী ৩৯ হাজার ৭০৭ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৯ হাজার ২৫৮ (পুরুষ ৩৪ হাজার ১০২, নারী ৫ হাজার ১৫৬), ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার ৮৫০ (পুরুষ ৩৬ হাজার ৪৭৯, নারী ৮ হাজার ৩৭১), মার্চে ৫১ হাজার ৭৮২ (পুরুষ ৪১ হাজার ১৬৪, নারী ১০ হাজার ৬১৮), এপ্রিলে ৪৫ হাজার ৪২০ (পুরুষ ৩৬ হাজার ৩১৩, নারী ৯ হাজার ১০৭), মেতে ২২ হাজার ৫৮২ (পুরুষ ১৭ হাজার ২৭০, নারী ৫ হাজার ৩১২) এবং ১৩ জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৯৩ জন (২ হাজার ৮৫০, নারী ১ হাজার ১৪৩) বিদেশে যান।

সৌদি আরবের বাইরে অন্যান্য দেশে যাত্রা নগণ্য : বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুসারে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বিদেশ যাওয়া ১ লাখ ৯৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ১ লাখ ৪৪ হাজার জনই গেছেন সৌদি আরবে। শতকরা হিসেবে এটি মোট বিদেশ যাওয়া কর্মীর প্রায় ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ গেছেন ওমান। ১৯ হাজার জন। এর বাইরে সিঙ্গাপুরে ৬ শতাংশ (১২ হাজার), জর্ডানে আড়াই শতাংশ (৫ হাজার) এবং ২ শতাংশের কিছু বেশি গেছেন আরব আমিরাতে।

করোনাকালীন শ্রমবাজার পরিস্থিতির তথ্য নিচ্ছে সরকার : গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, করোনার মধ্যে বৈদেশিক শ্রমবাজার সম্পর্কে মিশনগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সৌদি আরব, ইউএই, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ২৫ দেশে কর্মসংস্থানে দক্ষ কর্মী তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন করে পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, উজবেকিস্তানের শ্রমবাজারে লোক পাঠানো শুরু হয়েছে। কম্বোডিয়া, সেসেলম ও চীনেও কর্মীরা যাচ্ছেন। এ ছাড়া সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হয়েছে। বিদেশে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে আরও ৭১টি টিটিসি স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর