ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট থেকে বাংলাদেশের পক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। সূত্র : রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যাকাররা নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে। টাকা হাতিয়ে নিতে হ্যাকাররা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুইফটে অর্থ স্থানান্তরের ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠায়। এর মধ্যে মাত্র ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে। বাকি ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়, যা এখনো ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। এ ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি ও নিজেদের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়ী করে আসছে। তবে ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল ব্যাংক শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
ওই অর্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে বছরের ৬ মার্চ ফিলিপাইনের সিভিল কোর্টে পাল্টা মানহানির মামলা করে আরসিবিসি। এদিকে, একই ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক বা ফেডারেল আদালতে আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মামলা বাতিলের জন্য আরসিবিসিসহ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেডারেল আদালত ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফিলিপাইনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেন এবং মামলাটি ফেডারেল আদালতের বদলে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেন। ফেডারেল আদালতের ওই নির্দেশের পর ২০২০ সালের ২৭ মে নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট তথা ডিস্ট্রিক্ট আদালতে নতুন করে মামলা করে বাংলাদেশ। নতুন আদালতেও মামলা বাতিলের আবেদন করে আরসিবিসিসহ ছয় আসামি। তাদের ওই আবেদনের ওপর কয়েক দফায় শুনানির পর গত ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের পক্ষে রায় আসে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও আরসিবিসিকে মধ্যস্থতা করতেও নির্দেশ দেন আদালত। এ রায়ের জবাবে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানায় ফিলিপাইনের বেসরকারি ব্যাংকটি। অন্যদিকে, নিউইয়র্কের সুপ্রিম কোর্টের এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে, এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঢাকার একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, আরসিবিসিকে এখন বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে হবে, না হলে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
