দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আট মাস বাকি থাকলেও ভোট প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়ানো, উঠান বৈঠক, উন্নয়ন প্রচার, কর্মিসভা, বর্ধিত সভাসহ নানা কার্যক্রম শুরু করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। রমজানে ইফতার পার্টি না করলেও ইফতারসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছাকাছি যাচ্ছেন দলীয় নেতারা। একই সঙ্গে সামনে নৌকা নিয়ে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের এখনই বার্তা দেওয়া হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের এমপি ও আগামীতে মনোনয়নপ্রাপ্তদের এ নির্দেশনা দিচ্ছেন। বর্তমানে সংসদে থাকা এমপি, যারা এরই মধ্যে দলীয় প্রধানের বার্তা পেয়েছেন তারা পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন। আবার যারা কালো তালিকাভুক্ত আছেন, তারাও চেষ্টা করছেন মনোনয়নে টিকে থাকতে। আর নতুন করে যাদের ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হচ্ছে তারাও তৃণমূলে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। দলের একাধিক সূত্র জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক গতি বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী পাঁচ মাসে দলে ২ কোটি নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করবেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। মে মাস থেকে এ কার্যক্রম জোরদার করা হবে। পাশাপাশি তৃণমূলে সম্মেলনও চলবে। দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে দলে নতুন সদস্য করা অন্যতম। প্রথমবার যারা ভোটার হয়েছেন এবং নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে এ কার্যক্রমে। বিগত দিনে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে কড়াকড়ি থাকলেও এবার কিছুটা নমনীয় থাকবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। কারণ হিসেবে দলটির নেতারা বলছেন, আগে শুধু আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়া হতো। কিন্তু সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অনুগত এমন যে-কেউই দলের সদস্য হতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সদস্য সংগ্রহ তার অন্যতম। আমরা দেখব, যারা আওয়ামী লীগের সদস্য হতে চান তারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অনুগত কি না। যদি তারা অনুগত হন তাহলে সদস্য করব। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কোনো সদস্যকে আমরা সদস্যপদ দেব না।’ তিনি বলেন, ‘দেখা যায় যারা আওয়ামী লীগে আসতে চান, কিন্তু তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় বিএনপি করেন, তাই বলে তাকে সদস্য করব না- এমনটা হওয়া উচিত নয়। তিনি জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করেন কি না সেটাই দেখার বিষয়।’ দলীয় সূত্র জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই দলীয় নেতা-কর্মী-এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলে আসছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অনেক চ্যালেঞ্জিং। সে কারণে দলের নেতা-কর্মী-এমপি-মন্ত্রীদের প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবেচিন্তে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে এবং কর্মসূচিগুলোয় সমাগম বাড়াতে বলেছেন তিনি। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সদস্য সংগ্রহ অভিযানে জোর দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। ইফতারসামগ্রী বিতরণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে যাওয়া, কর্মিসভা, বর্ধিত সভা এবং তৃণমূল সম্মেলন সবকিছুই নির্বাচনী প্রস্তুতি।’ তিনি বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে কারা নৌকা পাবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাদের বার্তা দিচ্ছেন। এলাকায় আরও সক্রিয় হতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ‘স্মার্ট’ ইশতেহার গঠনের কাজ শুরু হচ্ছে।’ দলীয় সূত্র জানান, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে সদস সংগ্রহ অভিযান বেশ জোরালোভাবে চালাবেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। ঈদের পর মে মাসে শুরু হবে এ কার্যক্রম। আগস্টে কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করে না আওয়ামী লীগ। সে কারণে এ মাস সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এ কার্যক্রম চলবে। নভেম্বরে শুরু হবে দেশের নির্বাচনী ডামাডোল। সে কারণে এ পাঁচ মাস সদস্য সংগ্রহের উপযুক্ত সময় মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা। গত ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সদস্য সংগ্রহ করার তাগিদ দেন। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা নেতাদের ফোনে নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন বই সংগ্রহ করার জন্য। অনেক জেলা ইতোমধ্যে বই নিয়েছে। সদস্য সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ অপেক্ষায় আছেন ঈদের পর সংগ্রহ করবেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা দলে সদস্য বাড়ানোর কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরের সদস্য সংগ্রহ শেষ করে ইউনিট সম্মেলন, ওয়ার্ড সম্মেলন সর্বশেষ থানা সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। ইউনিট কমিটি দেওয়া হয়েছে। এখন ওয়ার্ড-থানা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিভাগের যেসব জেলা ইতোমধ্যে সদস্য সংগ্রহের বই নেয়নি, তারা এখন উত্তোলন করছে। যারা প্রথমবার ভোটার হয়েছেন, তরুণ প্রজন্ম এবং নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ তরুণ প্রজন্ম ও নারীরা যেদিকে ঝুঁকবে নির্বাচনী ফলাফল সেদিকেই মোড় নেয়।’ দলটির নেতারা জানিয়েছেন, অনেক ভোটার ভাসমান, যারা কোনো দলের সমর্থক নন। আবার এবার নতুন ভোটার হয়েছেন অনেকে। তাদের দলের সদস্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের আপাতত লক্ষ্য ২ কোটি নতুন সদস্য করা। এর পাশাপাশি দলে সদস্য নবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এটাও চলমান থাকবে। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, শেখ হাসিনার আদেশ-নির্দেশ মেনে চলবেন তাদের সদস্য করা হবে। ঈদের পর রাজশাহী বিভাগে এ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।’ দলের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ চলমান কাজ। জেলা-উপজেলায় এটি চলমান। ঈদের পর আরও জোরদার করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দলীয় সদস্য সংগ্রহ অভিযান বেগবান করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, মহান মুক্তিসংগ্রামের নীতি-আদর্শ বিশ্বাস ও লালন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, বিশ্বসেরা রাজনীতিবিদ দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল তারা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রংপুর বিভাগের অনেক জেলা-উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কাজ চলছে। যারা এখনো সদস্য ফরম সংগ্রহ করেনি, সেসব জেলা-উপজেলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে সদস্য সংগ্রহ বই নিতে।’