লোকসভা (ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের পর এবার বিধানসভা উপনির্বাচনেও ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (ইন্ডিয়া)। পক্ষান্তরে বেশ হতাশাজনক ফল পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট’ (এনডিএ)।
পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সাত রাজ্যের ১৩ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয় ১০ জুলাই। এসব আসনের কোথাও বিধায়কদের মৃত্যু, আবার কোথাও বিধায়কদের ইস্তফা দেওয়ায় উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। গতকাল ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ১৩ আসনের মধ্যে ১০টিতে জয়ী হয়েছেন ‘ইন্ডিয়া’র প্রার্থী, অন্যদিকে মাত্র ২টি আসনে জয় পেয়েছেন ‘এনডিএ’ প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন ১টি আসনে। জলন্ধর ওয়েস্ট (পাঞ্জাব) আসনে জয়ী ইন্ডিয়ার শরিক দল আম আদমি পার্টি (আপ) প্রার্থী মহিন্দার ভগৎ, দেহরা (হিমাচল প্রদেশ) আসনে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী কমলেশ ঠাকুর (রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর স্ত্রী), নালাগড় (হিমাচল প্রদেশ) আসনে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী হরদীপ সিং বাওয়া, মংলৌর (উত্তরাখন্ড) আসনে কংগ্রেস প্রার্থী কাজী নিজামুদ্দিন ও বদ্রিনাথ (উত্তরাখন্ড) আসনে কংগ্রেসের লখপত সিং ভুতোলা জয়ী। ভিক্রাবন্দি (তামিলনাড়ু) আসনে ডিএমকে প্রার্থী আন্নিউর শিবা জয়ী হয়েছেন। অমরওয়ারা (মধ্যপ্রদেশ) আসনে বিজয়ী বিজেপি প্রার্থী কমলেশ প্রতাপ শাহ। হামিরপুর (হিমাচল প্রদেশ) আসনে জয়ী বিজেপি প্রার্থী আশিস শর্মা। রুপাউলি (বিহার) আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শঙ্কর সিং। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের চার আসনেই জয় পেয়েছেন ইন্ডিয়ার শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। পশ্চিমবঙ্গের চার আসনে উপনির্বাচনে জয়ের পরই ওই তৃণমূল কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে, আবির খেলায় মেতে ওঠেন প্রার্থী থেকে শুরু করে কর্মী-সমর্থকরা। মানিকতলা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্তি পান্ডে পরাজিত করেছেন বিজেপি প্রার্থী ও অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে। রানাঘাট দক্ষিণ আসনে তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারীর কাছে হেরে গেছেন বিজেপির প্রার্থী মনোজ কুমার বিশ্বাস। রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূলের প্রার্থী কৃষ্ণকল্যাণী হারিয়েছেন বিজেপির প্রার্থী মানস কুমার ঘোষকে। অন্যদিকে বাগদা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর পরাজিত করেছেন বিজেপির প্রার্থী বিনয় কুমার বিশ্বাসকে। সম্প্রতি এপ্রিল-মে জুড়ে ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২৯ আসনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি জয় পেয়েছিল মাত্র ১২ আসনে। তৃণমূলের জয়ের সে ধারা অব্যাহত থাকল বিধানসভা উপনির্বাচনেও। শেষবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মানিকতলা ছাড়া বাকি তিন আসনেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু উপনির্বাচনের গতকালের ফলাফলে বিরোধীদের কার্যত ধূলিসাৎ করে দিল তৃণমূল। রাজ্যের এ ফলাফল নিয়ে তৃণমূল নেতা ও রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘উপনির্বাচনের ফলাফলে এটাই প্রমাণিত হলো যে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া বাংলায় বিকল্প কিছু নেই। তাই মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকেই বারবার বেছে নিচ্ছে।’ বিজেপির মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘উপনির্বাচনে দলের এ পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে দেয়নি। ভোটে অনেক অনিয়ম হয়েছে। শাসক দল সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’