কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৫৯ জন ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র দুজন ছাত্র। এই দুজনকে কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা বিভিন্ন পেশার মানুষ। এদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। এর আগেরদিন গত শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৪০ জন। এদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন ছাত্র। গতকাল আহত চারজন শিক্ষার্থীসহ ৮৫ জন হাসপাতাল ছেড়েছেন।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চোখে গুলির আঘাতে আহত তিন নারীসহ প্রায় একশর বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আল মাহমুদ লেমন জানান, ঢাকাসহ দেশের কয়েক স্থানে কয়েক দিনের সহিংসতার ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চোখে গুলির আঘাতে আহত তিন নারীসহ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যো চারজনের দুই চোখে গুলির পাশাপাশি সবার এক চোখে গুলির আঘাত রয়েছে। আগত সব রোগীকে চিকিৎসার পাশাপাশি এদের মধ্যে থেকে ৩৮ জন রোগী ভর্তি নেওয়া হয়েছে। ২২ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের দুই চোখে গুলির আঘাত থাকলেও একজন রোগী হাসপাতাল থেকে চলে যান। তিনজন দুই চোখে ঘোলা দেখলেও তাদের চোখ পরিপূর্ণ ঠিক হবে কি না সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। তারা তিনজন হলেন- যাত্রাবাড়ীর আসিফ (১৭) শনিরআখড়ার মবিন (১৮) ও উত্তরার সুমন। তাছাড়া ৭ থেকে ৮ জনের এক চোখে গুলির আঘাতের কারণে চোখ নষ্টের পথে।
গত ২১ জুলাই রাজধানীর শনিরআখড়ায় কাজ শেষে ফেরার পথে সংঘর্ষে হঠাৎ বুকে গুলি লাগে মাহবুবের। রাস্তায় বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে বিক্রি করতেন মাহবুব। তিনি এখন আইসিইউতে। তার স্ত্রী নীলা জানান, সংসারের অবস্থা ভালো না। এই চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসাও ভালো যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সেদিন বের হয়েছিলেন। বিকালে বাসায় ফেরার পথেই গুলি লাগে। সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অপারেশনের পর থেকে তাকে আইসিইউতে শিফট করা হয়। সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায় আইসিইউর সামনে স্বজনদের ভিড়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ রোগীদের নিয়ে এসেছেন। স্বজনদের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। ক্লান্তিতে অনেকেই কথা বলতে পারছেন না। কেউ কেউ বাকরুদ্ধ। গত ১৮ জুলাই বিকালে শনিরআখড়ায় সংঘর্ষের মাঝে ছররা গুলি এসে লাগে কাইয়ুমের চোখে, কপালে। এক চোখ হারিয়েছেন কাইয়ুম। অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতেন তিনি। বড় ভাই সাদ্দাম বলেন, ছোট ভাই চোখটা হারিয়েছে। এত দিনেও জ্ঞান ফিরল না। প্রাণে বাঁচুক অন্তত। তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরে যাক। কেউ যেন সন্তানহারা না হয়, পঙ্গু না হয়। হাসপাতালে আসা বেশির ভাগই শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মতো আইসিইউতে ভর্তি আছেন মো. শফিকুল। একটি তেলের পাম্পে কাজ করেন তিনি। গত ২১ জুলাই মৌচাক থেকে বাসায় ফেরার পথে বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ইমনের ডান পা হয়তো কাজ করবে না আর- এমন আশঙ্কা করছেন বাবা সুমন মিয়া। রাজধানীর নতুন বাজারে প্রতিদিনের মতো গত ১৯ জুলাই খেলতে বের হয়েছিল ইমন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে নতুন বাজারের দিকে গেলে তার পায়ে গুলি লাগে। ইমনের দুই পা গুলিবিদ্ধ হয়। এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে।