ব্যাংক খাত নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কার বিষয়টি অবগত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগছে। জনপ্রিয় হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে আমরা কিছু করছি না।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আলোচনার বিষয়বস্তু জানিয়ে গভর্নর এসব কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এম এ কাশেম, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মো. জসিম উদ্দিন, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন, ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, বিজিএমইএ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, বিটিএমএ-এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ-এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান ভূঁইয়া, বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই একটু সময় লাগছে। তাড়াহুড়ো করে আমরা কিছু করছি না। যারা দোষী আমরা তাদেরকেই টার্গেট করব। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হবে না। কারণ সেখানে অনেক শ্রমিক নিয়োজিত আছে। আমরা কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করছি না। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অথবা মালিকও হতে পারেন। তারা যদি কোনো খারাপ কিছু করে থাকেন সেটা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করলে সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হয় না। আমরা এখন পর্যন্ত এই নীতিতেই আছি। টেকসইভাবে দীর্ঘ মেয়াদে সমাধান করার চিন্তা করছি। ব্যাংকগুলোর কতখানি ক্ষতি কাদের দ্বারা হয়েছে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় না করে সমাধান করা সম্ভব না। হঠাৎ করে বন্ধ বা টাকা দিয়ে কোনো সমাধান হবে না। ব্যাংকিং কমিশন হলে দুর্বল ব্যাংক একীভূত বা অন্য কোনোভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যাংক কমিশনের ঘোষণা দিতে পারব। গভর্নর বলেন, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বর্তমানে কিস্তি দেওয়ার ১৮০ দিন পার হওয়ার পর খেলাপি হয়। এই সময় আমরা আন্তর্জাতিক মানের অর্থাৎ ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিনে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সেটা নিয়ে ব্যবসায়ীরা একটা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং আগের করোনার প্রভাব বিবেচনা করে এটা নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ব্যবসা আগের ওই পর্যায়ে নাই, এটা ৯০ দিনের মধ্যে করলে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে যাবে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি তাদের ক্রেডিট অ্যাক্সেসও কমে যেতে পারে। খেলাপি হয়ে যেতে পারেন। সে কারণে তারা এই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমি বলেছি, বিষয়টি আমরা দেখব। আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে পারব সেটা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। তবে আমরা একটা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে যাব। সেটা নিয়ে ব্যতয় নেই। গভর্নর বলেন, আন্দোলনের কারণে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সাময়িকভাবে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করব। যদি তারা আবেদন করে সেটা কেস বাই কেস যাচাইবাছাই করে কিছু করতেও পারি। ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। এটা নিয়ে যেন কোনো গুজব সৃষ্টি না হয়। এটা আমাদের কোনো পরিকল্পনার মধ্যেও নেই। বিবেচনাও করছি না। দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে আর সহায়তা দেওয়া হবে না। হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধ করে কিংবা ব্যাংকের জন্য টাকা ছাপিয়ে কোনো সমাধানের পথে যাওয়া যাবে না। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভাঙার বিষয়টি বিবেচনায় আছে। বৈঠকের বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতির গতি বাড়াতে এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যাংক ঋণের সুদের হার স্থিতিশীল রাখা, আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত ডলারের জোগান দেওয়া, এসএমইসহ ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা প্রদান, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ আরও বাড়ানো এবং অপরিশোধিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করার প্রস্তাব রাখেন।