জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা একটা মর্যাদাশীল বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশ বিদেশি সবাইকে বন্ধু হিসেবে দেখবে, কাউকেই প্রভু হিসেবে মেনে নেবে না। যে দিকে হাত বাড়াব সেদিকে বন্ধুর হাত পেতে চাই, কোনো আগ্রাসী হাত দেখতে চাই না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে একটি দল দেশকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। দেশ এখনো জঞ্জালমুক্ত হয়নি। এখন জাতীয় ইস্যুগুলোতে জনগণের ইস্পাতকঠিন ঐক্য প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। গতকাল তিনি খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ইস্টার্ন জুট মিল শ্রমিক ময়দানে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
চাঁদাবাজ, জুলুমবাজ আর কাউকে দেখতে চাই না : নড়াইল প্রতিনিধি জানান, জেলার সদর উপজেলার মালিবাগ মোড়ে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় পথসভায় বক্তৃতাকালে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের মতো চাঁদাবাজ, জুলুমবাজ আর কাউকে দেখতে চাই না। বৈষম্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে চাই।
শীর্ষ নেতাদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে খুন করা হয়েছে : ফরিদপুরে জামায়াত আমির : ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ (শহর শাখা) মাঠে গতকাল দুপুরে জেলা জামায়াতের কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এসব খুনের বিচার চাই। আল্লাহতায়ালার কাছে চাই, দুনিয়ার আদালতেও চাই। আমরা দেখতে চাই, তাদের ওপর যে জুলুম করা হয়েছিল তার সঠিক বিচার হয়েছে।
শেখ হাসিনা সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছিল : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তিন মাস আগেও কল্পনা করতে পারেনি খোলা ময়দানে মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া চাইতে পারব। গতকাল রাতে বরিশাল সফর উপলক্ষ্যে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতের আমির আরও বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বহু মানুষকে গুম ও খুন করা হয়েছে।
বহু মানুষকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, শুধু মাত্র সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। প্রবীণ ও বিজ্ঞ আলেমদেরও তারা জেলে দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। তাদের পায়েও তারা ডা াবেড়ি পরিয়েছে। কোমরে দড়ি পরিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহর আরস কেঁপে উঠেছিল এই নির্দোষ আলেমদের জন্য। কোরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তারা তিলে তিলে খুন করেছে। আমাদের সিপাহশালার বহু নেতাকে তিলে তিলে খুন করা হয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একজন বিচারপতি কলার পাতায় শুয়ে দেশ ছাড়তে চায়। তার এই অবস্থা আমাকে লজ্জিত করে। তবে তারা বিচারব্যবস্থা যেভাবে ধ্বংস করেছে তা আমাকে আরও বেশি লজ্জিত করে। তারা চেয়েছিল তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। এমন একটা ভাব তারা দেশের মালিক আর আমরা সবাই ভাড়াটে। কিন্তু আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে কোনো গুম, খুন, ছিনতাই হবে না। সবাই সম্মানের সঙ্গে নিজ মর্যাদা নিয়ে চলবে। আমরা এমন যুবসমাজ চাই, যেখানে মাদকের ছোঁয়া থাকবে না। তিনি বলেন, আমাদের তিনজন শীর্ষস্থানীয় নেতা একাধারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিল। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, তাদের হাত ছিল দুর্নীতিমুক্ত। সেই দলের মানুষগুলোই আজ জামায়াতে ইসলামী করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মোবারক হোসাইন, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আবদুল জব্বার, ভোলা জেলা আমির জাকির হোসাইন, পটুয়াখালী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নামজুল আহসান, ঝালকাঠি জেলা আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান প্রমুখ।