আগামীর বাংলাদেশ তরুণদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর দফায় দফায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারিনি। স্বৈরাচারকে তাড়াতে পারিনি। আমাদের সন্তানেরা সেই কাজটি করেছে। আমি তাদের ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাতির পক্ষ থেকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহতায়ালার সাহায্যে তারা অসাধ্য সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতেই তুলে দেব। মৌলভীবাজার জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল সকালে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী। অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন।
দলের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম নিজ জেলা মৌলভীবাজারে খোলা মাঠে কর্মী সমাবেশে ভাষণ দিলেন ডা. শফিকুর রহমান। বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই আন্দোলনের বীর সৈনিকদের একটি স্লোগান উচ্চারণ করে বলেন, ‘বুকের ভিতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। ক্ষোভটা ছিল সাড়ে ১৫টা বছর। এ সময়ে তারা জাতির ঘাড়ে বসে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দেশটাকে শ্মশান কিংবা গোরস্থানে পরিণত করেছিল। ২৮ অক্টোবর তারা লাশের ওপর নর্দন করেছে। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসে ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তারা খুন করে সেনাবাহিনীর চৌকশ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে। বিডিআর বাহিনীর সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করে। সাড়ে ৮ হাজারকে জেলে দেয়। জেলে ৩৫০-এর অধিক মারা যায়। নাম বদলে বিজিবি রাখা হয়। আগে নাম ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস। এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। কারা হত্যাকারী- জাতিকে জানতে দেওয়া হলো না। অন্ধকারে খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো। একটা বিশেষ দেশের প্লেন কেন এসেছিল ঢাকায়। এরপর হঠাৎ উধাও হয়ে গেল কীভাবে। আমরা সেই হত্যার বিচার চাই। জামায়াত আমির বলেন, এরপর শুরু হলো তান্ডব। প্রথম লক্ষ্যবস্তু করল জামায়াতে ইসলামীকে। শীর্ষ ১১ নেতাকে খুন করা হলো। পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক নেতাদের মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো কোর্টে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হলো। ফাঁসি দেওয়া হলো। কাউকে কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। জেলের ভিতর তাঁরা মৃত্যুবরণ করলেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা তখন আমাদের বন্ধু সব রাজনৈতিক সংগঠনকে বলেছিলাম- এটি জামায়াতের ওপর আঘাত নয়। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। আমাদের পাশে দাঁড়ান। ফ্যাসিজমকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করি। আমরা তাদের বোঝাইতে পারি নাই। তারপর একে একে সবাইকে ধরল। বিএনপি, হেফাজত, আলেম-ওলামা, অন্যান্য দল- কাউকে তারা ছাড় দিল না। সাংবাদিক বন্ধুদেরও ধরল। তিনি বলেন- জাতিকে এরা ৫৩ বছর দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। এরা ধরে নিয়েছিল তারা দেশের মালিক, আমরা সবাই ভাড়াটিয়া। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, চাইলে আমরা কিছু কিছু চাঁদাবাজি করতে পারতাম। কিছু দখল নিতে পারতাম। কিন্তু এটা আমাদের জন্য হারাম মনে করি।