কালবিলম্ব না করে শিগগিরই জুলাই জাতীয় সনদের সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ আহ্বান জানান। ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া দেখেই আমরা স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেব।’ এ সময় দলের পক্ষ থেকে তিনি সরকারের প্রতি তিনটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকৃত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়া গ্রহণ করে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা; সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া প্রণয়ন ও প্রকাশ করা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ স্বাক্ষরের অগ্রগতি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানকে ভিত্তিমূল ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাক্ষরে একটি আদেশ জারি করতে হবে। যে আদেশের অধীনে একটি গণভোট হবে। টাইম ফ্রেম নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নিচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, গণভোটের পর যখন বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি রিফর্ম অ্যাসেম্বলি হবে, এই রিফর্ম অ্যাসেম্বলি একসঙ্গে দুটি কাজ করবে। প্রথমটি এই আদেশের বাস্তবায়ন, বাংলাদেশের পার্লামেন্ট সচরাচর যে নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করে থাকে সেগুলো তারা পালন করবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখায় ঐকমত্য কমিশন একটি বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। যদি ২৭০ দিনের মধ্যে তারা এটি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় হিসেবে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই তারা কোনো দল নয়, জনগণের অভিপ্রায়কে প্রায়োরিটি দিয়েছে। তিনি বলেন, গণ অভ্যুত্থানকে ভিত্তিমূল হিসেবে জুলাই সনদে আনতে হবে। গণ অভ্যুত্থানের সরকার হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই সনদের আদেশে স্বাক্ষর করার জন্য শহীদ মিনারে যাবেন। জনগণের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জনগণের সামনেই দিতে হবে।
পাটওয়ারী বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশটা ড্রাফট আকারে জনগণের সামনে হাজির করতে হবে। এটা এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যিনি রয়েছেন, উনাদের ওপর জনগণের কিন্তু আস্থা নেই। ওনি বারবার কিন্তু জনগণের আস্থার বাইরে গিয়ে, আমাদের জুলাই সনদটাকে সংবিধানের অধীনে কথা বলে এটাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছেন।’ গণ অভ্যুত্থানের পটভূমি না ধরে ওনি জনগণের যে ঐতিহাসিক সনদ প্রকাশ, সেটাকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবেন বলে আমাদের একটা আশঙ্কা রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। আমরা বরাবর বলেছি জুলাই সনদ স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি ও দলিল নয়; অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিবেচনা করবে-এই ছিল আমাদের বক্তব্য।’
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ করেছি এনসিপির আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’