শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস ও নারী

সারা বিশ্বে নারী বহুবিধ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এক জরিপে দেখা যায়, পৃথিবীতে মোট ১৯৯ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীই নারী। যা ভবিষ্যতে ৩১৩ মিলিয়ন ছাড়াতে পারে।

ডায়াবেটিস ও নারী

নারী দিবসে বিশে^র সব নারীর প্রতি শুভেচ্ছা। আজ বিশ্ব নারী দিবস। পৃথিবীর সবকটি দেশে নারীদের সামগ্রিক উন্নতি বিবেচনায় রেখে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর সক্রিয় অংশীদার। এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের অবস্থান থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘ডায়াবেটিস ও নারী’- নিয়ে এখানে আলোচনা করছি।

 

এখনো পৃথিবীতে নারীদের বহুবিধ অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, ২০১৭ সালে পৃথিবীতে মোট ১৯৯ মিলিয়ন নারীর ডায়াবেটিস ছিল যা ২০৪০ সালে বেড়ে ৩১৩ মিলিয়ন হবে। এ সংখ্যাটি সামগ্রিক সমস্যার খুব সামান্যই প্রতিভাত করতে পারে। কেননা, একজন মহিলা ডায়াবেটিসের রোগীর ডায়াবেটিস চিকিৎসায় আরও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। পারিবারিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, লৌঙ্গিক বৈষম্য ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণহীনতা। এর ফলে মহিলাদের পুষ্টিহীনতা বা অপুষ্টির ঝুঁকি বেড়ে যায়, অস্বাভাবিক শারীরিক শ্রমের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। মহিলারা স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী, যার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মহিলারা এতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। মহিলাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো হলেও কিছু কিছু লক্ষণ শুধু মহিলাদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যেগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। এগুলো হলো :

► যৌনাঙ্গের ছত্রাক সংক্রমণ

► প্রস্রাবের সংক্রমণ

► মহিলাদের যৌন ক্রিয়ার অস্বাভাবিকতা

► পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম

 

মহিলাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিসমূহ :

০. দৈহিক স্থূলতা ও ৪৫-এর বেশি বয়স

০. ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস

০. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহিলা

০. ক্ষুদ্র বা বৃহৎ সন্তান প্রসবের ইতিহাস

০. গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস

০. উচ্চরক্তচাপ থাকা

০. রক্তের লিপিডের অস্বাভাবিকতা

০. শারীরিক শ্রমহীনতা

০. পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম

০. আগের হার্ট অ্যাটাক বা স্টোক

গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস মহিলাদের পুরুষদের তুলনায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলার হৃদরোগের ধরন আলাদা, কিছুটা বেশি বিধ্বংসী হলেও তাদের হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যাপক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। ডায়াবেটিসের কারণে অন্যান্য হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি ও ভিন্নতর। কিছু কিছু মহিলার এ সময় খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের সন্তান নিতে ব্যর্থ হওয়ার হার অনেক বেশি। ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলার অনেক জায়গাতেই তফাত থাকে না, কিন্তু গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিষয়টি যখন সামনে আসে তখন চিকিৎসা পদ্ধতি আমূল পাল্টে যায়। গর্ভধারণের প্রস্তুতির একটি অংশ হবে কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন <৬.৫% এর নিচে হতে হবে)। অনেক মুখে খাবার ডায়াবেটিসের ওষুধ গর্ভকালের নিরাপত্তা বিঘœ করতে পারে বলে সেগুলো গর্ভধারণের আগেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সে হিসেবে যত দ্রুত সম্ভব ইনসুলিন দিয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করাই সর্বোত্তম। গর্ভধারণ আকফড়ী নারীর দৈহিক স্থূলতা কমানোর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে একই সঙ্গে।

 

আক্রান্ত মহিলার জীবন ব্যবস্থাপনা :

০. শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম-এটি একই সঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও দৈহিক স্থূলতা কমাতে সাহায্য করবে

০. ধূমপান থেকে বিরত থাকা

০. খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ফলমূল, শাক-সবজি ও আস্ত শস্যদানা গ্রহণের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে

০. নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করা

 

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

নারীর ডায়াবেটিসে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে বহুবিধ ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকবে। যেমন- সন্তান না হওয়ার ঝুঁকি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ, নারীর ক্ষেত্রে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস প্রতিরোধের প্রথম পর্যায় হবে ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস হয়ে গেছে কিনা তা জানা, অর্থাৎ ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং করতে হবে। এক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত ঝুঁকিগুলো উপস্থিত থাকলে তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সব বয়সী সব নারীর ক্ষেত্রে ক্রমময় জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস অবশ্য পালনীয়। যারা সন্তান ধারণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন নারীর জন্য ডায়াবেটিস ও হরমোনের মাত্রা জানা অতি জরুরি।  আমরা যদি সুস্থদেহী মেধাবী মানুষের পৃথিবী চাই তবে প্রথমেই নজর দিতে হবে নারীর সুস্বাস্থ্য অর্জন ও বজায় রাখার ওপর। একজন সুস্থ মা-ই পারেন সুস্থ-সবল সন্তান প্রসব করতে। যে হবে ভবিষ্যতের সুনাগরিক আর ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে নারীর ডায়াবেটিসকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রাধান্য দিয়ে পদক্ষেপ নিরূপণ করতে হবে।

লেখক-

ডা. শাহজাদা সেলিম

হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর