শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হার্ট অ্যাটাক থেকে হার্ট ফেইলুর

হার্ট অ্যাটাক এমন একটি অসুস্থতা যার জটিলতার জন্য প্রতি চারজনের একজন তাৎক্ষণিকভাবে এবং অনেকে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাই সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

হার্ট অ্যাটাক থেকে হার্ট ফেইলুর

ছবি : ইন্টারনেট

আপনি কি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন অথবা আক্রান্ত হয়ে কোনো হৃদরোগ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন?    হার্ট অ্যাটাক এমন একটি অসুস্থতা যার জটিলতার জন্য প্রতি চারজনের একজন তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকে হাসপাতালে ভর্তির পরও মৃত্যুবরণ করেন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ব্যক্তি এক বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। যার ফলে এ রোগকে সারা বিশে^ মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

হার্ট অ্যাটাকের ফলে হার্টের একটি নির্দিষ্ট অংশ অকেজো হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে হার্ট তার কর্মক্ষমতা আংশিকভাবে হারিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। দুর্বল হার্ট প্রায় সময়ই ব্যক্তির শারীরিক প্রয়োজনমাফিক রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয় যার জন্য পরবর্তীতে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে থাকে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে খুব দ্রুত হার্টের দুর্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় হার্ট তার গতি বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করার প্রয়াস পায়, তবে এ ধরনের আচরণের ফলে হার্টের মাংসপেশির ক্ষতির পরিমাণ দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং হার্ট একসময় মারাত্মক অবস্থায় পতিত হয়, যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার আর কোনো পথ  খোলা থাকে না। রোগীর শরীরে ধীরে ধীরে হার্ট ফেইলুরের লক্ষণ পরিস্ফুটিত হতে থাকে। যেমন-  অল্প পরিশ্রমে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করা, খুব সহজে হাঁপিয়ে ওঠা, চিৎ হয়ে শুতে গেলে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো উপক্রম হওয়া, পেট ফেঁপে যাওয়া, সব সময় পেট ভরা ভরা অনুভূতি হওয়া, ক্ষুধা-মন্দা দেখা দেওয়া, বুক ধড়ফড় করা, বুকে চাপ অনুভব করা, কাজ কর্মে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, কাজ-কর্মে অনীহা দেখা দেওয়া, অত্যধিক শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেওয়া, হাতে-পায়ে পানি আসা ও ফুলে যাওয়া, মাথা ঘুরা, বমি বমি ভাবের উদ্বেগ হওয়া, অস্থিরতা দেখা দেওয়া, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট অনুভব করা ফলশ্রুতিতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ খুব কমে যাওয়া, প্রায়ই পেট খারাপ হওয়া, ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি।

তবে হার্ট অ্যাটাকের পরে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে হার্টকে দুর্বলতার হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। অনিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ চিকিৎসা গ্রহণ না করারই শামিল। অনেককে দেখা যায় কিছুদিন চিকিৎসা গ্রহণের পর তারা সুস্থ হয়ে গেছেন এ ধরনের ধারণা থেকে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ধীরে ধীরে রোগীর হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং ক্ষতির মাত্রা চরমে পৌঁছার পর আবার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে, তবে তখন রোগীর হার্ট এত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় যে, তাকে আর চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার তেমন কোনো সুযোগ থাকে না।

হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী সময়ে অনেকেই হার্টে রিং পরে থাকতে পারেন আবার অনেকে বাইপাস অপারেশন করে থাকতে পারেন। যদি আপনি রিং পরেন অথবা বাইপাস অপারেশন করেন অথবা কোনোটিই না করে থাকেন, সব ক্ষেত্রের উপযুক্ত মেডিসিন চিকিৎসা (Non Invasive কাটা-ছেঁড়া বিহীন চিকিৎসা) গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তা না হলে আপনার হার্ট খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখতে হবে যে, যারা একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সুস্থ থাকার জন্য এবং অকাল মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য সারাজীবন কমবেশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার অংশ হিসেবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, সঠিকভাবে নিরাপদ মাত্রার কায়িকশ্রমের অভ্যাস ধরে রাখা, শারীরিক ওজন স্বাভাবিক পর্র্যায়ে বজায় রাখা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। এর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিসিন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। রোগীকে জীবন ধারায় পরিবর্তন এনে তা সব সময় অনুশীলন করা। এসব কিছুর সঠিক প্রয়োগের জন্য রোগীকে অবশ্যই একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা অপরিহার্য।  

 

লেখক-

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সর্বশেষ খবর