শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এনাল ফিশার

এনাল ফিশার, আমাদের দেশে যা ‘গেজ’ রোগ নামে পরিচিত। রোগটি সাধারণত বাচ্চা থেকে বয়স্ক যে কারও হতে পারে। তবে, তরুণ ও মাঝবয়সীরা এর ঝুঁকিতে থাকেন সবচেয়ে বেশি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কারও এই রোগটি হতে পারে।

এনাল ফিশার

আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষ মলদ্বারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন যেমন- পাইলস, ফিশার, ফিস্টুলা ইত্যাদি। কিন্তু অনেকেই বিশেষ করে মহিলারা এই রোগগুলোকে গোপন স্থানের সমস্যা মনে করেন এবং মলদ্বারের রোগের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকেন। ফলশ্র“তিতে অনেকেই গ্রামেগঞ্জে এমনকি শহরেও অনভিজ্ঞ লোক দ্বারা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। আমাদের পারিপার্শ্বিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং শিক্ষার অভাব ও অসচেতনতাÑ এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মলদ্বারের বা পায়ুপথের রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এনাল ফিশার যা আমাদের অনেকের কাছেই ‘গেজ’ রোগ নামে পরিচিত।

 

এনাল ফিশার রোগে সাধারণত যা হয় তা হলো মলদ্বারের চামড়ার ফাটল বা চির হওয়া যা সাধারণত মল শক্ত হলে বা ঘন ঘন মলত্যাগের কারণে মলদ্বার ফেটে ঘা হয়ে থাকে। এ রোগ বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক যে কারও হতে পারে। তবে তরুণ/মাঝবয়সীদের এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের ক্ষেত্রে এ রোগ সমানভাবে হয়ে থাকে।

 

কারণসমূহ

►   এনাল ফিশার হওয়ার জন্য মূলত দায়ী কোষ্টকাঠিন্য। মলত্যাগের সময় কোত/বেশি চাপ দেওয়ার বা মল শক্ত হয়ে বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বা ঘা হয়। আঁশযুক্ত খাদ্য না বা কম খাওয়ার কিংবা ফলমূল বা শাক-সবজি কম খাওয়া মল শক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।

►   ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হওয়া।

►   মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময় ও বাচ্চা প্রসব পরবর্তী সময় (নরমাল ডেলিভারি) এই রোগ দেখা দিতে পারে।

►   মলদ্বারে সাপোসিটরি দেওয়ার জন্য।

►  এক্ষেত্রে জেনে রাখা জরুরি যে মলদ্বারের অন্যান্য রোগ যেমন- টিবি, Chron’s Disease , ক্যান্সার  ইত্যাদি রোগের উপসর্গ হিসেবে এটি দেখা দিতে পারে।

 

উপসর্গ/লক্ষণসমূহ

মলদ্বারে ফিশারের প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথা, জ্বালাপোড়া ও রক্তক্ষরণ। তবে এই রোগে রক্তক্ষরণের পরিমাণ সাধারণত কম থাকে।

 

Acute Anal Fissure : এক্ষেত্রে সাধারণত রোগীরা মলত্যাগের পর মলদ্বারে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। যা কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে একই সঙ্গে তাজা রক্ত যেতে পারে (পায়খানার সঙ্গে বা ফোঁটায় ফোঁটায়)।

 

Chronic Anal Fissure : দীর্ঘস্থায়ী মলদ্বারের ঘায়ে রোগীদের ভিন্ন উপসর্গ থাকে। মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপি-, ফুলে থাকা ((Sentineal Piles) চুলকানি, কষ পড়া ইত্যাদি। এক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা একবারেই থাকে না। অনেক সময় মলদ্বারের ভিতর একই মাংসপিন্ডের মতো থাকতে পারে (Hypertrophied Anal Papillae) ।

 

প্রতিরোধ

প্রতিরোধের মূল উপায় হলো জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন।

 

►   কোষ্টকাঠিন্য যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

►   আঁশযুক্ত খাবার যেমন ফলমূল, সবুজ আঁশযুক্ত শাক-সবজি ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।

►   পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

►   শক্তিপ্রয়োগে মলত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

রক্ষণশীল চিকিৎসা

►   ওষুধের মধ্যে রয়েছে মল নরম করার এবং মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করার ওষুধ। এজন্য আঁশজাতীয় খাবার যেমন- সবজি, টাটকা ফলমূল, ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।

►   সিজ বাথ (Sitz Bath) নিলে উপকার পাওয়া যায়। এটির নিয়ম হচ্ছে আধ-গামলা লবণ মিশ্রিত গরম পানিতে নিতম্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।

►   মলদ্বারে ব্যথানাশক/Steroid  মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

অপারেশন

রক্ষণশীল চিকিৎসা বা ওষুধে রোগ ভালো না হলে বা রোগ বেশিদিন স্থায়ী হলে তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো অপারেশন। Lateral Internal Sphincterotomy এই অপারেশন করলে ৯৭%-৯৮% ভাগ রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায় এবং নিয়ম মেনে চললে তা আবার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।

 

আরেকটি বিষয় অনেকে ভাবেন যে, অপারেশনের পর মলত্যাগ করবেন কীভাবে? অপারেশনের অব্যবহিত পর মলত্যাগ করা সম্ভব। সাধারণত ২/১ দিনের মধ্যে রোগী বাড়ি চলে যেতে পারে।

 

লেখক-

ডা. আফরিন সুলতানা,

সার্জারি বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর