এনাল ফিসার একটি সাধারণ পায়ুপথের রোগ। জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ এ রোগে ভুগে থাকেন। এনাল ফিসারের লক্ষণ হল পায়ুপথে ব্যথা। মল ত্যাগের পর পায়ুপথের ব্যথা শুরু হয়, এটি কখনো তীব্র ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ব্যথা, কখনো কেটে যাওয়ার মতো, কখনো পিন দিয়ে খোঁচার মতো, কখনো বা ভারি ভোতা ধরনের ব্যথা হয়। এছাড়া পায়ুপথে জ্বালা-পোড়া করে। প্রথম দিকে মল শক্ত হলে ব্যথা-জ্বালা-পোড়া শুরু হয়। মল ত্যাগের পর ব্যথা শুরু হয় বলে রোগী মলত্যাগে ভয় পায়। ফলে মল আরও কঠিন হয়ে ওঠে। পরে মল ত্যাগের সময় ব্যথা-জ্বালা-পোড়া আরও বেড়ে যায়। এটিকে একটি বিষচক্রও বলা যায়। ব্যথার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, চুলকানি, পায়খানার রাস্তা ভেজা ভেজা থাকে ইত্যাদি নানা সমস্যা হতে পারে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে; এনাল ফিসারে রক্ত খুব বেশি যায় না। অল্প রক্ত মলের সঙ্গে লেগে-লেগে যায়। যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যায় ভুগছেন তাদের এনাল ফিসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এনাল ফিসার হলে মলত্যাগের সময় ও মলত্যাগের পরে সাংঘাতিক যন্ত্রণা হয়। এ ছাড়াও মলত্যাগের পর রক্তপাত হয় এবং পায়ু পথের চারপাশে চুলকানি হয়। ওষুধ খেয়ে সাময়িকভাবে এনাল ফিসারের সমস্যায় উপকার পাওয়া গেলেও পুরোপুরি নিরাময় হয় না। তাই অনেক সময় চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।
কারণ : এনাল ফিসার হওয়ার জন্য মূলত দায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য। মল ত্যাগের সময় কোঁত/বেশি চাপ দেয়ার অথবা মল শক্ত হয়ে বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বা ঘা হয়। আঁশযুক্ত খাদ্য না খাওয়া কিংবা ফলমূল বা শাকসবজি কম খাওয়া মল শক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। ঘন ঘন মলত্যাগ কিংবা ডায়রিয়া হওয়া। তাই সময়মতো চিকিৎসা প্রয়োজন।
চিকিৎসা : প্রাথমিক পর্যায়ে এনাল ফিসারের চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা হয়। স্থানিক কিছু মলম ও মল নরম করার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এনাল ফিসার একটু বেশি দিন হয়ে গেলে এটি ক্রনিক হয়ে যায়, তখন আর ওষুধে কাজ হয় না। কারণ এ সময়ের মধ্যে পায়ুপথ সংকুচিত হয়ে যায়। তখন অপারেশনের মাধ্যমে পায়ুপথটি ঠিক করে দিতে হয়। এ অপারেশনের নাম Lateral Internal Sphincterouomy (LIS)। আগে একটি ছোট কাটার মাধ্যমে এ অপারেশন করা হতো। বর্তমানে কাটাছেঁড়া ছাড়াই এ চিকিৎসা করা হয়। লেজারের একটি বিশেষ ধরনের রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে পায়ুপথ বড় করে দেয়া হয়। এতে কাটাছেঁড়া বা রক্তপাত নেই, ব্যথা অন্যতম। অপারেশনের পরপরই রোগী স্বাভাবিকভাবে মল ত্যাগ করতে পারেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাসায় ফিরে যেতে পারেন। দুই দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারেন। রোগীর অপারেশনের আগে তীব্র ব্যথা জ্বালা- পোড়া তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। অনেক দিনের মল ত্যাগের কষ্ট ভালো হয়ে যায়। এটি একটি আধুনিক চিকিৎসা, যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সুস্থ হওয়া যায়। এসব বিষয়ে অবহেলা না করে সচেতন হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা এসব ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থা থেকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। মনে রাখবেন প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
-অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান, কোলোরেক্টাল সার্জন,
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।