শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের উদ্যোগে ‘বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি কৃষি শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি, কৃষি উন্নয়ন এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০০১ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং এর নামকরণ করা হয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে শহুরে গ্রাম : এটি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত। ‘শহুরে গ্রাম’ হিসেবে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকায় ৮৭ একরের এক টুকরো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিবাস। সবুজে ঘেরা শেকৃবি সবুজে পরিপূর্ণ, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, ফুল ও কৃষিভিত্তিক উদ্যান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘মিনি জু’ রয়েছে, যেখানে হরিণ, অস্ট্রিসের দেখা মেলে। একদিকে ফসলের বিস্তীর্ণ খেতে সবুজের সমারোহ, এগ্রোনমি মাঠে পোকা খেতে আসা সকালের বক পাখি, বিকালের কবুতর-টিয়ার ঝাঁক, ঘাট বেষ্টিত পুকুর যেমন গ্রামীণ পরিবেশ সৃষ্টি করে অন্যদিকে আছে সুউচ্চ একাডেমিক ভবন, শহুরে ঢংয়ে অল্প জায়গাতে তৈরি করা বিশাল আকারের শিক্ষার্থী হল, শিক্ষক ডরমেটরি, ভারী যান চলাচলের শব্দ এবং কোলাহল।
সবুজের সঙ্গে দিনরাত : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) পড়াশোনা করার পরিবেশ সত্যিই অনন্য। এখানে শিক্ষার্থীরা সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকে এবং ল্যাবরেটরি ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রমে নিয়মিতভাবেই যুক্ত থাকে। বিশেষ করে কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগগুলোতে গবেষণার জন্য অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগও আছে। যা তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে উন্নত গবেষণা কার্যক্রমে সহায়তা করে।
একাডেমিক ও ক্যারিয়ার : বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত চারটি অনুষদ রয়েছে। সেগুলো হলো- কৃষি অনুষদ, প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান ও পশুপালন অনুষদ, মৎস্য, জলজ পালন এবং সামুদ্রিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং কৃষি ব্যবসা ব্যবস্থাপনা অনুষদ। চারটি অনুষদের আওতায় রয়েছে মোট ৩৫ বিভাগ। এ ছাড়াও একটি সিড টেকনোলজি নামে স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট রয়েছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি কোর্সে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর লেভেলে কৃষি অনুষদে ১৫০৭ জন, কৃষি ব্যবসা অনুষদে ২৭৫ জন, ভেটেরিনারি অনুষদে ২৬৬ জন এবং ফিশারিজ অনুষদে ৮২ জন রয়েছেন। পিএইচডিতে রয়েছেন ১৩২ শিক্ষার্থী। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির সবাই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত থাকতে হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট টপিকে থিসিস এবং ডিফেন্স দিয়ে থাকেন। মাঠ পর্যায়ে ডাটা নেওয়া থেকে ল্যাবেও করা লাগে গবেষণা। এসব শিক্ষার্থীর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফাইন্ডিংস কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে উৎপন্ন জ্ঞান এবং প্রযুক্তি কৃষি খাতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক।
শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা : শেকৃবিতে শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে শতভাগ আসন ব্যবস্থা। নেই কোনো গণরুম। ছেলেদের চারটি ও মেয়েদের তিনটি হলসহ মোট সাতটি হল রয়েছে।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব পাশে একটি পৃথক ছয় তলা ভবনে অবস্থিত। গ্রন্থাগারটি সম্পূর্ণ রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন প্রযুক্তি দিয়ে স্বয়ংক্রিয়। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রিডেবল লাইব্রেরি কার্ড দ্বারা নিজেই বই নিতে এবং জমা দিতে পারেন। গ্রন্থাগারটির দ্বিতীয় তলায় একত্রে ২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারেন।
সামাজিক দায়বদ্ধতায় শেকৃবি : শেকৃবি বহিরাঙ্গন বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, মাঠ দিবস উদ্যাপন, বীজ ও চারা বিতরণ এবং প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ইত্যাদি। ভেটেরিনারি সেবা দিতে শেকৃবি প্রতিষ্ঠা করেছে ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটাল। দুর্যোগ মোকাবিলা করতেও শেকৃবি গুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন শিক্ষকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কৃষিকে ছড়িয়ে দিতে নানাবিধ কার্যক্রম পালন করে থাকেন। অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের নিজ উদ্যোগে ৯০ মিনিট স্কুল এবং গ্রিন বাংলাদেশের উদ্যোগে ছাদ বাগানে উদ্বুদ্ধকরণ, কৃষিতে খুঁটিনাটি প্রশিক্ষণ এবং নানা ধরনের চারা বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন।