বাংলাদেশ প্রতিদিন : উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার যাত্রা শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
ড. মো. সবুর খান : গর্বের সঙ্গে আমি বলি, ১০১/১ গ্রিন রোডে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু আমার। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আমি বিশ্বাস করি, সব সময় কমিটমেন্ট ঠিক থাকতে হবে ব্যবসায়। সেই সঙ্গে মানুষকে সঠিক পরিষেবা দিতে হবে। আমি সব সময়ই পেছন থেকে কাজ করে যাই। নইলে আমার পক্ষে এতগুলো প্রতিষ্ঠান করা সম্ভব হতো না। ড্যাফোডিল পরিবারের আজ ৫৪টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। প্রায় ২০ হাজার মানুষ এই পরিবারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। যাদের সবাই উচ্চশিক্ষিত। উদ্যোক্তা হিসেবে আমার সফলতার পেছনে রয়েছে আমার ক্লায়েন্টরা, আমার শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের সমস্যার কথা নিজে শুনে সমাধানের চেষ্টা করে থাকি সব সময়। আর আমি কখনো আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মী শব্দটা পছন্দ করি না। আমি মনে করি আমরা সবাই এক ড্যাফোডিল পরিবার। সবাই আমরা একই পরিবারের সদস্য। আমি সব সময় যোগ্য মানুষকে সম্মান দিতে প্রস্তুত। আমার বাবা-মা আমাকে শিখিয়েছেন, মানুষকে সম্মান না দিলে সম্মান পাওয়া যায় না। আমার মা বলতেন, তুমি যতটুকু সেক্রিফাইস করতে পারবে ততই তুমি ওপরে উঠতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিয়ে অগ্রযাত্রা ও ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি সম্পর্কে বলুন।
ড. মো. সবুর খান : পাহাড় থেকে যে পানি নামে সেটা দিয়েই নদী হয়। এই নদীর স্রোত একেঁবেঁকে গিয়েই সমুদ্রে মিশে যায়। প্রতিবন্ধকতার কারণে এই আঁকাবাঁকা পথ তৈরি হয়। এক পথ থেকে অন্য পথে ধাবিত হয়। আমার শুরু থেকেই আইটি নিয়ে ভিশন ছিল। ইচ্ছা ছিল অন্য পথে যাব না। ২০০১ সালের এক ঘটনায় আমি যদি বাধাগ্রস্ত না হতাম হয়তো ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হতো না। তবে আমি আইটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে থেমে থাকিনি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত দেশের প্রথম আইটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছি। এরই ধারবাহিকতায় এখনো কাজ করে যাচ্ছি। আমি ১৯৯৭ সালে ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি প্রতিষ্ঠা করি। প্রতিষ্ঠানটি এখনো সুনামের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অন্যদিকে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি সরকারের অনুমোদন নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করি। এটি এখন ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটিতে অবস্থিত, যা এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সুবিশাল সর্বাধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস। আমার সহকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতা, নিরলস পরিশ্রম ও একাগ্রতা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায় আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে। কভিড-১৯ মহামারির সময় অনেক প্রতিষ্ঠান যেখানে স্থবির হয়ে ছিল আমরা একদম প্রথম দিন থেকে নিজেদের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনলাইনে করেছি এবং সেখানেও সফলতা পেয়েছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের প্রসার সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। স্কুল থেকে শুরু করে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং কলেজ ইত্যাদি সেক্টরে আমরা প্রবেশ করেছি। আমাদের লক্ষ্য আমরা ভালো লিডারশিপ তৈরি করতে চাই। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানই দেশের বাইরে থেকে কর্মী নিয়ে আসে। তাই আমরা বিশ্বমানের দক্ষ লোক তৈরিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে- এ সম্পর্কে বলুন।
ড. মো. সবুর খান : আমার মনে হয় আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। আউটকাম বেইজড শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন। এর মানে হচ্ছে, একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে আগ্রহী সেটা বের করতে হবে। ধরুন কেউ ব্যাংকার হতে চায় কিন্তু সে হয়তো কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। তখন শিক্ষকের দায়িত্ব তাকে উদ্বুদ্ধ করা যেন সে ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজে তার কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অর্জিত মেধা দিতে পারে। ফলে যেটা হবে, সে পড়াশোনা শেষ করার পাশাপাশি নিজের পছন্দসই কর্মক্ষেত্রের জন্যও প্রস্তুত হতে পারবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের গবেষণাক্ষেত্র পিছিয়ে রয়েছে, কীভাবে উত্তরণ সম্ভব বলে আপনি মনে করেন।
ড. মো. সবুর খান : ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ই গবেষণার ক্ষেত্রে জোর দিয়ে আসছে। দেশে অনেক প্রতিভাবান রয়েছেন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই প্রতিভাবানদের কাজে অর্থায়ন করা। ড্যাফোডিল পরিবার সব সময়ই গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এই ধারা সামনেও অব্যাহত থাকবে। আমাদের শিক্ষকদের আমরা অর্থায়ন করছি। অনেকেই কথায় কথায় সিলিকন ভ্যালির উদাহরণ দিয়ে থাকেন। সেখানকার গবেষকদের অর্থায়ন করার জন্য অনেকে বসে থাকেন। এমন পরিবশ আমরা কেন তৈরি করতে পারব না। যার উদ্ভাবনী শক্তি রয়েছে তার কিন্তু ফান্ডিং লাগবে, তার মার্কেটিং লাগবে। তার একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। দেশের সার্বিক উন্নতিতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম কেমন চলছে।
ড. মো. সবুর খান : কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ড্যাফোডিল কম্পিউটার লিমিটেডের ডিসিএল ল্যাপটপ ও ডিসিএল পিসি নিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছি। আরও অনেক পণ্যই আমরা অ্যাসেমব্লিং করি কিন্তু একই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সফটওয়্যার সলিউশন। বিভিন্ন রকম সলিউশন আমরা দিয়ে থাকি। শিক্ষাক্ষেত্রের বাইরে আমরা সবচেয়ে বেশি ফোকাস করেছি বিনিয়োগ খাতে। এই খাতে আমরা একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গঠন করেছি। এই ক্ষেত্রে আমরা উদ্যোক্তাদের বেশি অগ্রধিকার দিয়ে থাকি। ৩ কোটি টাকার ইন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করেছি, যা ৬ কোটি টাকায় উন্নীত করার চেষ্টা করছি। ছাত্রছাত্রীরা যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তারা বিনা সুদে এখান থেকে ফান্ড পাবে।