শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই ২৩ জানুয়ারি 'নেতাজি ফাইল' প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই অভিযোগ তুলল সনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস৷
কংগ্রেসের প্রশ্ন, কেন এত দেরি করা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী এখনই কেন ফাইল প্রকাশ করছেন না? তাঁর যদি এতটাই তাগিদ ছিল, কয়েক দিনের মধ্যেই তো ফাইল প্রকাশ করে দিতে পারতেন৷ তা না-করে নেতাজির জন্মদিনে এত দিনের গোপন তথ্য প্রকাশ করার পিছনে আসলে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের অঙ্ক৷ রাজ্যবাসীকে 'নেতাজি ফাইল' দেখিয়ে তাঁদের সহানুভূতি ও ভোট কুড়োতে চান মোদী৷ রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপনেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী আনন্দ শর্মার অভিযোগ, যে কোনও বিষয়কেই মোদী প্যাকেজ এবং ইভেন্টে পরিণত করেন৷ তার পিছনে তাঁর একটা উদ্দেশ্য থাকে৷ ২৩ জানুয়ারি 'নেতাজি ফাইল' প্রকাশের পিছনেও সেই প্যাকেজ ও ইভেন্ট করার মানসিকতা রয়েছে৷ আনন্দ শর্মার কটাক্ষ, বিহারের ভোটের জন্য তিনি বিদেশে গিয়ে মায়ের কথা স্মরণ করে চোখের জল ফেলেছিলেন, আর এ বার পশ্চিমবঙ্গের ভোটের জন্য 'নেতাজি ফাইল' প্রকাশ করতে চাইছেন ২৩ জানুয়ারি৷
রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেস এই অভিযোগ করছে ঠিকই, কিন্তু 'নেতাজি ফাইল' নিয়ে সনিয়া গান্ধীর দলের অস্বস্তিটাও চোখ এড়াচ্ছে না৷ আনন্দ শর্মাই বলতে বাধ্য হয়েছেন, ফাইলে এমন কিছু আছে, যা প্রকাশ হোক, সেটা এত দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীরা চাননি৷ সে প্রসঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, পুরো সময়ে তো শুধু কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল না৷ অটলবিহারী বাজপেয়ী ছ' বছর ক্ষমতায় ছিলেন৷ তার আগে এমন দু'টি সরকার ছিল, যেখানে বিজেপি হয় তার শরিক ছিল অথবা তাদের সমর্থনে সরকার চলছিল৷ তখনও 'নেতাজি ফাইল' প্রকাশ করা হয়নি৷ বিশেষ করে, বাজপেয়ী কেন এটা প্রকাশ করলেন না? বিজেপি অবশ্য এ ব্যাপারে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চায়নি৷
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ অবশ্য জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ফাইল প্রকাশের কাজ তাঁরা শুরু করে দিচ্ছেন৷ সরকারি সূত্রের খবর, বিদেশ মন্ত্রকে এই সব গোপনীয় নথিপত্র থাকে এনজিও ফাইলস-এর তত্ত্বাবধানে৷ সেখানে দু'জন অফিসার এর দায়িত্বে থাকেন৷ ফাইল থাকে সিলবন্ধ অবস্থায়৷ বিদেশমন্ত্রী ফাইল দেখতে চাইলে, তাঁকেও লিখিত ভাবে কারণ বলতে হয়৷ তার পর সেই ফাইল মন্ত্রীর কাছে আসে৷ মন্ত্রী যতক্ষণ তা দেখবেন, ততক্ষণ অন্তত একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সেখানে থাকবেন৷ ফাইলের কোনও প্রতিলিপি বা ফোন দিয়ে ছবি তোলা কিছুই যাতে না-করা হয়, সে জন্যই এই সতর্কতা৷ প্রাক্তন এক বিদেশমন্ত্রীর কথায়, 'এ জন্যই আমি কখনই ওই ফাইল দেখতে চাইনি৷'
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজি দেশের স্বাধীনতার জন্য হিটলার, মুসোলিনি, জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন৷ মিলিটারি ইনটেলিজেন্স সেকশন সিক্স বা এমআই ৬ হল ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা যাঁরা বিদেশে গোয়েন্দাগিরি করে গোপন তথ্য ব্রিটিশ সরকারকে দেয়৷ তারাই ভারতে গোয়েন্দা সংস্থা তৈরি করেছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তারা নেতাজি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করত৷ স্বাধীনতার পরেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তারা তথ্য জানতে চাইতেই পারে৷
এখনও বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতেই কাজ করে৷ ব্রিটিশ ও আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার ব্যাপারে গোপনীয় ফাইলে বিস্তারিত বিবরণ থাকতে পারে৷ আর সেটা দিয়ে নেহরুর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে পারে বিজেপি৷ যদিও নেহরু লাল কেল্লায় আইএনএ-র সেনানী ও অফিসারদের বিচারের সময় আইনজীবীর ভূমিকায় নেমেছিলেন৷ সুভাষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল৷ কিন্তু সুভাষকে নিয়ে বিদেশিদের এই গোয়েন্দাগিরিতে যদি তিনি সাহায্য করে থাকেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ করার সুযোগ পাবে বিজেপি৷ সেটাই কংগ্রেসকে চিন্তায় রেখেছে৷
