মিউনিখের শপিং মলে গুলি চালানোর ঘটনার সঙ্গে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) বা অন্য কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগের প্রমাণ পায়নি সেখানকার পুলিশ। মিউনিখের পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী ছিল একজনই। তিনি ইরানি বংশোদ্ভূত আঠারো বছরের জার্মান তরুণ আলি ডেভিড সোনবোলি। মানসিক অবসাদ এবং একাকীত্ব থেকেই সে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
প্রসঙ্গত, শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ মিউনিখের একটি রেস্তোরাঁয় প্রথমে হামলা চালায় ওই কিশোর। গ্লক ১৭ পিস্তল থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারপর সে ঢুকে পড়ে ঐ শপিং মলে। নয় জনকে (এর মধ্যে সাতজনেরই বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে) গুলি করে হত্যা করে সে নিজেও আত্মঘাতী হয়। ঘটনায় অন্তত ২৭ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার রাতে মিউনিখের পুলিশ আলির বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায়। তার বাড়ি থেকে বেশ কিছু বইপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলির বিষয়বস্তু— কীভাবে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে বহু মানুষ মারা যায়। গুলি করে হত্যা সংক্রান্ত কম্পিউটার গেমসের বেশ কিছু সিডিও তার বাড়িতে মিলেছে।
পাশাপাশি, হামলার সময় আলির সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে ‘হোয়াই কিডস কিল: দ্য মাইন্ড অফ স্কুল শ্যুটার’ নামে একটি বইও মিলেছে। ব্যাগে ছিল ৩০০ রাউন্ড গুলি। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি অ্যান্ডার্স ব্রেভিক নামে নরওয়ের এক হত্যাকারীর ছবি নিজের হোয়াট্সঅ্যাপের প্রোফাইলে দিয়েছিল আলি। ২০১১ সালে নরওয়েতে ৭৭ জনকে হত্যা করেছিল ব্রেভিক। ঘটনাচক্রে শনিবারই ছিল সেই হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্তি। পুলিশের অনুমান, গুলি করে মানুষ মারার কথা আলি দিনরাত ভাবত এবং রীতিমতো পরিকল্পনা করেই সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এরই মধ্যে আলির বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, স্কুলে পড়ার সময় একটানা সাত বছর ধরে হেনস্থার শিকার হয়েছিল ওই তরুণ। বেশ কিছুদিন ধরে সে মানসিক অবসাদেও ভুগছিল। এ জন্য তাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে হয়। আলির এক প্রাক্তন সহপাঠীও শনিবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একই কথা জানিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় আমরা আলির পিছনে খুব লাগতাম। ও রেগে গিয়ে বলত, একদিন অত্যাচারীদের হত্যা করবে’।
পুলিশের অনুমান, স্কুলে হেনস্থা হওয়ায় কমবয়সি ছেলে মেয়েদের উপর আলির রাগ ছিল। সে জন্যই মূলত কম বয়সিদেরই সে মারার চেষ্টা করেছিল। পুলিশের এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে হামলাকারীর সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্ট দেখে। এক তরুণীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করার পর আলি ভুয়া একটি পোস্টে জানায়, মিউনিখের ওই রেস্তোরাঁয় গেলে কমবয়সি ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে পেটপুরে খেতে পারবে। এই পোস্টের উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট— রেস্তোরাঁয় ঢুকে যত বেশি সম্ভব কমবয়সিকে হত্যা করা।
বিডি প্রতিদিন/২৪ জুলাই ২০১৬/হিমেল-০৫