অনেক সময় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধারকাজে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয় দমকলকর্মীদের। তাই এবার ভারতের কলকাতার পুলিশ বাহিনীতে ইউএভি বা ড্রোন ক্যামেরা দফতরের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করলেন দেশটির দমকল কর্তারা। দেশটির দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দমকলের বিভিন্ন্ ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। টেকনিক্যাল দিক খতিয়ে দেখে যদি দফতরের কাজের সুবিধা হয় তা হলে নেওয়া যেতেই পারে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
কলকাতার বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেট হোক কিংবা পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেনস কোর্টের অগ্নিকাণ্ড। শহরের বড় বড় আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে দমকল দফতরকে। সম্প্রতি জেশপ কারখানার আগুন নেভাতে গিয়ে কোথা থেকে আগুন লেগেছে বা তার উৎসস্থল কী তা খুঁজে পেতেই বেশ বেগ পেতে হয় দমকল বিভাগকে। কিন্তু দুর্দান্তের মতো যদি কোন ড্রোন ক্যামেরা দমকলের হাতে থাকত তাহলে তার মাধ্যমেই উপর থেকে আগুনের ব্যাপ্তি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া গেলে অনেক সুবিধা হতো বলে মনে করছেন দমকল আধিকারিকরা। একদিকে যেমন আগুনকে অ্যারেস্ট করতে সুবিধা হবে, তেমনই পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনাও সেরে ফেলা সম্ভব হবে দ্রুত। তাতে বিষয় সম্পত্তির ক্ষতি এড়িয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে বাড়তি সুবিধা পাবেন দমকলকর্মীরা। দমকলকর্মীরাও মনে করছেন সাধারণ ড্রোন যে উচ্চতায় উঠে ছবি পাঠায় তাতে আগুনের হলকা বা তাপ পৌঁছতে পারবে না। ফলে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই কোন ঝঞ্ঝাট ছাড়াই গোটা এলাকার ছবি বুঝতে পারবেন শীর্ষ আধিকারিকরা।
এরই পাশাপাশি গত বছর কলকাতা শহরের জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত ড্রোন থাকতে উদ্ধার কাজ চালানোর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা মিলতে পারে। ধ্বংসস্তূপের ভিতরের পরিস্থিতি থেকে কেউ আটকে রয়েছে কি না তাও বাইরে বসেই জানতে পারবেন শীর্ষ আধিকারিকরা। আগুন নেভানোর কাজে ভারতে সে ভাবে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহার শুরু না হলেও বিদেশে ড্রোনের ব্যবহার হয় প্রায় সর্বত্র। আর ড্রোনের সৌজন্যেই আগুন নেভানোর কাজ থেকে উদ্ধারকাজে গিয়ে প্রাণের সন্ধ্যান পাওয়ার মতো অনেক উদাহরণও রয়েছে।
কী ধরনের সুবিধা হয় এই ড্রোন ক্যামেরার ব্যবহারে? দমকল আধিকারিকদের মতে কোনও আগুনের ব্যাপ্তি ছবি আগুনের কাছে না গিয়েও বোঝা সম্ভব। কোন প্রান্ত থেকে আগুন লেগেছে এবং হাওয়ার সাহায্য নিয়ে কোন দিকে তা অগ্রসর হচ্ছে তাও বোঝা যেতে পারে। সেই মতো আশপাশের বাসিন্দা সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কোন বহুতলের ক্ষেত্রে ছাদে কেউ আটকে রয়েছে কি না বা তাঁকে কীভাবে উদ্ধার করা হবে সেই পরিকল্পনাও করা সম্ভব ড্রোনের সাহায্যে। আগুনের পাশাপাশি শহরের কোন জরাজীর্ণ বাড়ি বা ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ভিতর কী অবস্থা তাও ড্রোনের নজরে সহজেই বুঝতে পারবেন উদ্ধারকারীরা। দমকল কর্তাদের তথ্য অনুযায়ী জরাজীর্ণ বাড়ির ভিতরের কি অবস্থা তা অনেক সময় বাইরে থেকে বোঝা যায় না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই অনেক সময় জরাজীর্ণ বাড়ির বাকি অংশ ভাঙার কাজ করতে হয়। ড্রোন হাতে এসে সেই কাজ অনেকটা একই সঙ্গে ঝড় বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও ড্রোনের সাহায্য সূদুরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছেন দেশটির দমকল আধিকারিকরা। ভারতে এই মুহূর্তে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ভারতীয় সেনার উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা এই ড্রোন রয়েছে। তবে বহুমূল্য ড্রোনের কেনার বিষয়টি চিন্তা ভাবনার স্তরে থাকবেও বেসরকারি বিপর্যয়ের সময় ড্রোন ভাড়া নেওয়া যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার