ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ১৪০টি অরক্ষিত জায়গা চিহ্নিত করেছে ভারত। এছাড়া সীমান্ত বরাবর নিরাপত্তা বাড়ানো, নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি রোহিঙ্গা পাচারের সঙ্গে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচারণা শুরু করেছে বিএসএফ। শুক্রবার বহিনীর ডিজি কে.কে.শর্মা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দিল্লিতে বিএসএফ’এর সদর দফতরে পাঁচদিন ব্যাপী বিএসএফ-বিজিবি ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের শেষে আজ একথা জানান তিনি। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত বরারবর নজরদারি বাড়ানোর ব্যাপারে এই বৈঠকে একটি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শর্মা বলেন ‘বাংলাদেশে যেভাবে একটা বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমরা উভয় পক্ষই এই ইস্যুটি নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছি। সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা রোধে বিএসএফ-বিজিবি আমরা দুই পক্ষই একধিক পদক্ষেপ নিয়েছি’।
বিএসএফ ডিজি আরও জানান ‘বিজিবি আমাদের নিশ্চিত করেছে যে রোহিঙ্গাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং তারা যাতে বাংলাদেশ পেরিযে আমাদের দিকে চলে আসতে না পারে সেজন্য একাধিক জায়গায় চেক পোস্ট ও নজরদারি চালাবে তারা’।
কে. কে. শর্মার অভিমত, দীর্ঘ ১০৯৬ কিলোমিটার বিস্তৃত দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর ১৪০টি অরক্ষিত জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জায়গাগুলি রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সেখানে আরও অধিক সংখ্যায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে সীমান্ত আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের পাচারের সঙ্গে জড়িত দালালদের উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান শর্মা। তিনি বলেন ‘সিস্টার এজেন্সি, গোয়েন্দা এজেন্সি’র সহায়তা নিয়ে দালালদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সীমান্তের উভয় পাড়েই এই দালাল চক্র অত্যন্ত সক্রিয় এবং এদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানান বিএসএফ ডিজি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ভেতর বা সে দেশের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা যাতে ভারতে কোন নাশকতা করতে না পারে এব্যাপারে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা বিএসএফ’কে জানান বিজিবি ডিজি মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি’র পক্ষ থেকে বিএসএফ’কে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
আবুল হাসান জানান ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটি মিয়ানমারে তৈরি হয়েছে, এটা আমাদের সমস্যা নয়। ইতিমধ্যেই ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এটা এখন আমাদের দেশের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। কক্সবাজারেই রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যাপারে আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার সব রোহিঙ্গাদেরই নিবন্ধন করার কাজ শুরু করেছে। নিবন্ধন ছাড়া কাউকেই কোনরকম সহায়তা প্রদান করা হবে না।
ডিজি পর্যায়ের এই বৈঠকে ২৪ সদস্যের বিজিবি-র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি’র ডিজি মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। অন্যদিকে ২৬ সদস্যের ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফ ডিজি কে. কে. শর্মা। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনআইএ, নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো’র শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়া এই বৈঠকে উভয় দেশের সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, সীমানা পিলার নির্মাণ, জাল রুপি, মাদক পাচারসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সেদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তাদের সনাক্তকরণের প্রক্রিয়া দ্রুত করার বিষয়টি নিয়েও বিএসএফ-বিজিবি’র মধ্যে আলোচনা হয়। সীমান্ত বরাবর ভারতীয় সেনা সদস্যদের উপর বাংলাদেশি অপরাধীদের হামলার বিষয়টিও উত্থাপন করে বিএসএফ। অন্যদিকে বিজিবি’র পক্ষ থেকেও সীমান্ত বরাবর বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/৬ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল