মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও তালেবানের ক্ষমতা দখল আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এবং ওয়াশিংটনের হিসাবনিকাষ নিয়ে চলছে সমালোচনা। এ বিষয়ে লিখেছেন ডয়চে ভেলের ইনেস পোল।
পূর্বসূরীদের কাছ থেকে আফগান সংকট সমাধানের ভালো কোনো পথ পাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে শেষ সিদ্ধান্তগুলোর একটি হিসাবে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর এই আক্রমণ যৌক্তিকতা হারিয়েছে, এমন অকাট্য যুক্তি থাকলেও সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিতে পারেননি তার পূর্বসূরী বারাক ওবামাও।
এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য দেশে ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন জো বাইডেন। বেশিরভাগ আমেরিকান এমন একটি দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি বা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে চায় না, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মুক্তিদাতার বদলে দখলদার হিসেবে দেখা হয়।
বাইডেনের একটি সাফল্য প্রয়োজন ছিল। অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টই নির্বাচনে জেতার জন্য যুদ্ধ শুরু করেছেন। কিন্তু এই প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসের দুই কক্ষে এবং আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিজের দুর্বল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে একটি যুদ্ধ শেষ করার দরকার ছিল।
পশ্চিমা বেসামরিক নাগরিকরা হুমকিতে
বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে এইসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে।কিন্তু আফগানিস্তানে উদ্ভূত নাটকীয় পরিস্থিতিতে মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে এসবের কোনোটিই অজুহাত হতে পারে না।
গত দুই দশকে পশ্চিমা চাকরিজীবীদের সহায়তা করা হাজার হাজার আফগান ও তাদের পরিবারই কেবল হুমকিতে নন, সামরিক জোট তাদের নিজেদের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দূতাবাসের কর্মী, এনজিও কর্মী এবং অন্যদের আগে বের করে না এনেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সামরিক বাহিনী সরিয়ে তালেবানের আসার পথ সুগম করে দেয়া হলো। এটা কিভাবে হলো?
এটা কিভাবে হলো যে হোয়াইট হাউজের তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা মাত্র কদিন আগেই দাবি করলেন যে, শিগগিরই কাবুলের পতন ঘটছে না? এখন রাজধানীতে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ, আফগান সামরিক বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে পতাকাও বদলে ফেলেছে। তালেবানের ভয়ে তারা এটা করেছে এবং আশরাফ গনির মতো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে সরকারের পক্ষে লড়াইয়ের প্রয়োজনও তেমন একটা বোধ করেনি।
গোয়েন্দা তৎপরতা এবং দেশটি সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের বিষয়ে এটা কী ধারণা দেয়? এবং এই পটভূমিতে জো বাইডেনের কথার কী মূল্য থাকলো? তিনি বলেছিলেন, আফগানিস্তান আর সন্ত্রাসবাদী হুমকিতে নেই এবং এজন্য দেশটিকে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।
স্থানীয় কর্মীদের পরিত্যাগ করা হলো
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার প্রতিক্রিয়ায় আফগানিস্তান যুদ্ধের সূচনা হয়। একটা বিভ্রান্তিকর যুক্তি দিয়ে বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, হামলার ২০তম বার্ষিকীতে সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শেষ হবে। সম্ভবত মার্কিন সেনা আগ্রাসনের একটি অগৌরবান্বিত অধ্যায়ের সমাপ্তিকে নিউ ইয়র্কের স্মৃতিসৌধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিজয় হিসেবে ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন।
২০ বছরে কিছুই জেতা সম্ভব হয়নি। বরং এই সময়ে বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। বিশেষ করে তারা, যারা পশ্চিমা সামরিক জোটকে সমর্থন করে কেবল নিজেদেরই নয়, নিজেদের পরিবারকেও হুমকিতে ফেলেছেন এবং তাদের এখন অসহায় অবস্থায় ফেলে আসা হচ্ছে।
এমন ঘটনা আমাদের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে। আমাদের সবাইকে লজ্জিত করে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন