মহামারিতে কেঁপে উঠা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মুখোমুখি হলো আরেক বিরূপ সময়ের। ঠিক দুই বছর আগেই যেখানে কোভিড থেকে বাঁচতে পারাটাই যেন ছিল একমাত্র চাওয়া, সেখানে মানুষকে এখন সম্মুখীন হতে হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত নতুন নতুন সঙ্কটের।
একদিকে অপরাধ লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে, কারণে অকারণে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ- স্কুল থেকে শুরু করে সাবওয়ের নিরাপত্তা প্রশ্নের সম্মুখীন। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি তেলের।
স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা বেড়ে চলেছে। হু হু করে বাড়ছে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য। ইতিমধ্যে আইএমএফ বৈশ্বিক মন্দার আশংকা প্রকাশ করেছে। সারা বিশ্ব শীঘ্রই মন্দার দ্বারপ্রান্তে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের একটি আপডেটে আইএমএফ জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি এবং মহামারি ফিরে আসায় সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলি ইতিমধ্যে অন্ধকার হয়ে গেছে।
এই হুমকি যদি তীব্রতর হতে থাকে, বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে দুর্বলতম সময়ের মুখোমুখি হবে, আর তা হবে বিশ্বজুড়ে তীব্র স্থবিরতার সময়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে।
দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, বেতন বাড়েনি
নিউ ইয়র্কের একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ৬৫ বছর বয়সী মিস ওয়িলিয়াম বারবারই দুঃখ করে বলছিলেন, সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। রুটির দাম বেড়েছে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ, ট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছে, বাড়ি ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু তার বেতন বাড়েনি।
টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস নিউজে এইচ এন্ড এস বেকারির সহ-মালিক প্যাটেরাকিস, জুলাইয়ে ময়দার মূল্য ৩৫% বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন, "এটি সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ঘটেছে।" এই যুদ্ধ "বিশ্বের রুটির ঝুড়ি" হিসেবে বিবেচিত একটি দেশে গম, ওটস এবং রান্নার তেলের উৎপাদন ব্যাহত করেছে।
ইউক্রেন এবং রাশিয়া বিশ্বব্যাপী গমের সরবরাহের ২৫ শতাংশ উৎপাদন করে। রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সেখানে বেশিরভাগ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু রিজার্ভ এখনও থাকলেও তা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
গম চাষ, তেল উৎপাদন
একদিকে সাপ্লাই চেইনে সঙ্কট, মহামারির কারণে সৃষ্ট আংশিকভাবে শ্রমিকের ঘাটতি আরেকদিকে তেলের মূল্য বৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছে সরবরাহ ব্যয়।
আমেরিকান বেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও রব ম্যাকি বলেছেন, "দুর্ভাগ্যবশত সেই খরচগুলো ভোক্তাদের বহন করতে হবে। এবং আমাদের সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিরা এটি অন্য কারও চেয়ে বেশি অনুভব করতে চলেছে।"
সাময়িকভাবে বিকল্প উপাদান ও ইউক্রেনের বাইরে উৎপাদিত গম এবং ময়দা আনার দিকে ঝুঁকলেও, বেকারি শিল্প সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রে জমি খালি করে আরও গম চাষ, এবং জ্বালানি খরচ কমাতে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য।
গ্যাস নিয়ে বাইডেনের প্রতিশ্রুতি
গ্যাসের মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা জো বাইডেন কোনভাবেই পারছেন না এর লাগাম টানতে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবারগুলোকে বাজারের তালিকা ছোট করতে বাধ্য করছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে এমন ভীতি সৃষ্টি করেছে যার ফলস্বরূপ তেলের মূল্য গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। আর এর খেসারত আমেরিকানরা দিচ্ছে তেলের পাম্পে।
অকল্পনীয় মূল্য বৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের একটি বৃহৎ অংশ উবার এবং লিফটে গাড়ি চালিয়েই জীবন নির্বাহ করে।
৪৫ বছর বয়সী ফিলিপ জিন, যখন গত রবিবার রাতে উবারের জন্য তার গাড়ির ট্যাঙ্ক ভরেছিলেন, তখন প্রতি গ্যালনের দাম ছিল ৪ দশমিক ১৯ ডলার। সাত ঘণ্টা পরে, এটি লাফিয়ে পৌঁছে ৪ দশমিক ৪৫ এ, যা একটি "অকল্পনীয়" চিত্র।
৪ বছর আগে রাইডশেয়ার অ্যাপে কাজ শুরু করা পেনসিলভানিয়ার ড্রাইভার বলেন, জ্বালানি খরচ গড়ে তার আয়ের প্রায় দশ শতাংশ খেয়ে ফেলে, আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ষাট শতাংশে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন