স্যার রবার্ট ওয়ালপুল থেকে ঋষি সুনাক, ৩০১ বছরের যাত্রা। এই প্রথম ব্রিটেনের অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হচ্ছেন ঋষি সুনাক। একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।
১৭২১ সালে ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন স্যার রবার্ট ওয়ালপুল। বহুজাতিক ও বহুমাত্রিক ব্রিটেনে ৩০১ বছর পর প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাক ইতিহাস গড়বেন।
এবার ঋষি সুনাকের প্রধান দায়িত্ব –দেশের জনগণের মনে আস্থা তৈরি করা, দেশের অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণ। দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার কাজও করতে হবে তাকে। ফেরাতে হবে আগাম নির্বাচনের জন্য আসা ঝড়ও।
বরিস জনসন যখন পদত্যাগ করেন তখন লিজ ট্রাসের সাথে প্রতিযোগিতার শেষ পর্যন্ত টিকে বাদ পড়েন তিনি। সেই লড়াইয়ে তিনি এগিয়ে ছিলেন জনমত জরিপে। তবে তখনও একজন এথনিক রাজনীতিবিদ রক্ষণশীল দলের প্রধান হবেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন; এটা হয়তো রক্ষণশীল সদস্যরা মানতে পারেননি। তবে ৪৫ দিনের মাথায় লিজ ট্রাস ভুল প্রমাণিত হয়েছেন, ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ক্ষমতা।
ব্রেক্সিট ও কোভিডের সময় অর্থনীতি সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা, ঠান্ডা মাথার রাজনীতি, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন সব মিলিয়ে দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে ঋষি সুনাক ছাড়া কনজারভেটিভ পার্টির সামনে আর বিকল্প নেই।
ব্রিটেনের রাজনীতিতে কয়েক বছর ধরেই চর্চায় রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাইকে ঘিরে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। যে সব ব্যক্তি ব্রিটেনের বাইরের বাসিন্দা কিন্তু পেশা সূত্রে ব্রিটেনে রয়েছেন, তাদের সে দেশের সরকারকে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। ‘প্রভাব খাটিয়ে’ সেই কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে ঋষির স্ত্রী অক্ষতার বিরুদ্ধে। কিয়েভে মস্কোর আগ্রাসনের পর রাশিয়া থেকে আয় হয় এমন ব্যবসাগুলো প্রশ্নের মুখে পড়ে। ব্রিটেনের প্রথম সারির রাজনীতিবিদ হওয়ার সুবাদে স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগের তির ছিল ঋষির দিকে। তবে এই অভিযোগ পরে অস্বীকার করেন ঋষি। বিতর্ক থাকলেও তাতে খুব একটা আমল দেননি তিনি।
ঋষি সুনাকের পরিচয় ও শিক্ষা ও কর্মজীবন
সুনাকের বাবা যশবীর ও মা ঊষা – দুজনেরই জন্ম ভারতের পাঞ্জাবে, ভালো কাজের সুযোগে ও পড়াশুনোর জন্য তারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। যশবীর সুনাক ব্রিটেনে একজন জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) ডাক্তার হিসেবে ও ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন।
মেধাবী ছাত্র সুনাক আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ-ও করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুনাক ব্রিটেনের চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার (অর্থমন্ত্রী) হন। সুনাকের আর একটা পরিচয় হল, তিনি ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তির জামাতা। নারায়ণমূর্তির কন্যা অক্ষতার সঙ্গে তার আলাপ স্ট্যানফোর্ডেই, পরে তারা দু’জনে বিয়ে করেন।
সুনাক অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনই জানাজানি হয়, তার স্ত্রী অক্ষতা ট্যাক্সের কারণে ‘নন ডমিসাইলড’ – অর্থাৎ বিদেশে তার উপার্জিত অর্থের জন্য তিনি ব্রিটেনে কোনও আয়কর দেন না। যদিও এর মধ্যে বেআইনি কিছু নেই, তবু ঋষি সুনাকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বিরাট অস্বস্তি বয়ে এনেছিল।
রাজনৈতিক জীবন
রাজনৈতিক জীবনে ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ‘লোকাল গভর্নমেন্ট’-এর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০১৯ সালে বরিস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার গুরুত্ব আরও বাড়ে। এরপর সরাসরি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। বর্তমানে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টিতেও জনপ্রিয় মুখ তিনি। এদিকে তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সুনাকের।
জনসনের সরে যাওয়ার ঘোষণায় ঋষি সুনাককে এগিয়ে রেখে শিরোনাম করে ব্রিটেনের অধিকাংশ জাতীয় সাংবাদমাধ্যম। দ্য ডেইলি এক্সপ্রেস জানায়, বরিস জনসন ডাউনিং স্ট্রিট ১০- এর দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোয় প্রধামন্ত্রীর মুকুট পাচ্ছেন ঋষি। দ্য সানে, জনবিশৃঙ্খলা এড়াতে জনসন না দাঁড়ানোয় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ঋষি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল