৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে পরাজিতরা সারা আমেরিকায় ভয়ংকর একটি সহিংসতার অবতারণা করতে পারে। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল যারা এখন পর্যন্ত মেনে নেয়নি, তাদের অন্তত ১৮৯ জন এ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হয়েছেন। তারা যদি জয়ী হতে না পারেন-তাহলে এমন সহিংসতার আশংকা প্রকাশ করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি কর্তৃপক্ষ।
এমনকি বাইডেন প্রশাসনও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিশ্বখ্যাত ‘নিউজইউক’ এক প্রতিবেদনে ২৯ অক্টোবর উল্লেখ করেছে, ট্রাম্প সমর্থিত রিপাবলিকানরা যদি জয়ী হতে পারে তাহলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের কর্তৃত্ব পাবে উগ্রপন্থি রিপাবলিকানরা। সেটিও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সর্বনাশ ডেকে আনবে। তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের কোনো পদক্ষেপেরই অনুমোদন দেবে না। নাজুক অবস্থায় নিপতিত হবার আশংকায় ‘ঘি ঢেলে দিয়ে’ সামগ্রিক অর্থনীতি পরিস্থিকে আরো বিপর্যস্ত করতে তারা দ্বিধাবোধ করবে না। ‘যারা ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে দ্বিধা করেনি, তারা আরো ভয়ংকর পরিস্থিতিকে আমন্ত্রণ জানাবে-এতে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকা উচিত নয়’-মন্তব্য ডেমক্র্যাটিক পার্টির নীতি-নির্ধারকদের।
সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে আসন্ন নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অভিমত পোষণ করেছেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জন কোহেন উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ৩৮ বছরের কর্মজীবনে কখনো এমন ভয়ংকর হুমকির সম্মুখীন আমাকে হতে হয়নি। এমন হুমকি আসছে যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিকে বিপন্ন করতে পারে।
নিউইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহে বিতরণকৃত এক বুলেটিনে সতর্ক করা হয়েছে, ভোট কেন্দ্র, নির্বাচনী প্রচার-সমাবেশ এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর হামলার আশংকা করা হচ্ছে। যারা সহিংসতার মাধ্যমে জনজীবনে অস্থিরতা আনতে চায়-তারাই এমন অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে। বর্ণ-জাতিগত দাঙ্গা লাগিয়ে ফায়দা হাসিলের মতলব রয়েছে ট্রাম্পের উগ্রপন্থি সমর্থকদের-এমন আশংকা সর্বত্র। ওরা নির্বাচনী কর্মকর্তা ছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে টার্গেট করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান শহরগুলোর পুলিশ এবং বেশ কটি সিটির পুলিশ এসোসিয়েশনের ৫৫০ জন অফিসারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ১৯ অক্টোবর এক ব্রিফিংকালে। এই ব্রিফিংয়ে এফবিআই এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের সাইবার সিকিউরিটি ও অবকাঠামোগত সিকিউরিটি এজেন্সির উদ্ধৃতিও দেয়া হয়েছে।
এই ব্রিফিংয়ের অন্যতম সংগঠক ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের অরেঞ্জ কাউন্টির পুলিশ প্রধান ডন বার্ণেস বলেছেন, চরমপন্থিদের ওপর পর্যবেক্ষণকালে জানা যাচ্ছে যে, ভোট কেন্দ্র এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভয়ংকর হামলার শিকার হতে পারেন। তবে কোন কোন এলাকা এমন টার্গেটের অন্তর্ভুক্ত সেটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হতে পারেনি। এমন হামলার দিক-নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। লাগাতার মিথ্যাচারে নির্বাচনী পরিবেশকে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘অন্ধ-ভক্তদের’কে। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে পরাজিত হবার রেজাল্ট যেন কোনভাবেই মেনে না নেন-তেমন মনোভাব আগে থেকেই তৈরী করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আরিজোনা, টেক্সাস-সহ বিভিন্ন স্থানের রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীরা শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন যে, তারা নির্বাচনে বিজয়ী হলেই ফলাফল মেনে নেবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে অক্টোবরের শুরুতে স্থানীয় পর্যায়ের পুলিশ অফিসারদের মধ্যে একটি ভিডিও-বিতরণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার কৌশল বাতলে দেয়া হয়েছে এই ভিডিও ফুটেজে। গতবছর ফেডারেল কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে গঠিত ‘স্পেশাল টাক্সফোর্স’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আসন্ন নির্বাচনের আগে এবং ভোটের সময় বিভিন্নস্থানে সহিংসতা চালানোর হাজারো পরিকল্পনার তথ্য জেনেছেন। ইতিমধ্যেই এমন ষড়যন্ত্রের তথ্য জেনে এফবিআই তদন্ত করেছে। বেশ কিছু আলামতও সংগ্রহে সক্ষম হয়েছেন গোয়েন্দারা।
কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সী পেলসীর বাসায় হামলা চালিয়ে তার স্বামীকে আহত করার ঘটনাটিকেও উগপন্থিদের আচরণ বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনী কর্মকান্ড এবং সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা নির্দলীয় একটি থিঙ্কট্যাংকের সহযোগী পরিচালক রাচেল ওরে এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে জানান, ইতিমধ্যেই অনেক স্টেটে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আবার অনেক স্থানে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ এবং ইউএস সিনেটের ৩৪ আসন ছাড়াও বেশ কটি স্টেট গভর্ণর পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের মধ্যবর্তী নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল খুব ভালো রেজাল্ট দেখাতে পারেনি। এবারও তেমন আশংকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক রিপাবলিকানদের পাল্লা ভারি বলে বিভিন্ন জরিপে উদঘাটিত হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল