বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করল বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর পরিবর্তীত পূর্বাভাস ২ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রভাব পরিবর্তনের সম্ভাবনা এনেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও। বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জন্য প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ। জানুয়ারিতে যে প্রাক্কলন ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ করোনা পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়ার প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও প্রবৃদ্ধি দৃশ্যমান। তারপরও মন্থরতার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ঋণের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
সম্প্রতি সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংকের পতন ব্যাংক খাতে বড় ধরনের আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে। ইউএসবি ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে অধিগ্রহণ করে নিলেও অর্থনীতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার ওপর রয়েছে তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগুলো বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। এদিকে ইঙ্গিত করেছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। সম্প্রতি তিনি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের কাছাকাছি থাকার ব্যাপারে পূর্বাভাস দিয়েছেন।
তার ভাষায়, “আমেরিকা ও ইউরোপে ভোক্তাদের স্থিতিশীলতা কিংবা চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল হয়ে আসার পরও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি থাকবে ৩ শতাংশের কম বা তার আশপাশে। তার চেয়ে উদ্বেগের বিষয় আগামী পাঁচ বছর অর্থনীতির রূপরেখা এর থেকে পরিবর্তন ঘটবে না তেমন। বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য এটি ভালো খবর নয়।
জানুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ করে আইএমএফ। সেখানে দাবি করা হয়, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াবে। অক্টোবরের দেওয়া পূর্বাভাস থেকে তুলনামূলকভাবে যা বেশি। কিন্তু সতর্ক করে দেওয়া হয়, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো ভঙ্গুর। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এটি প্রভাব ফেলতে থাকবে। সেই সঙ্গে রয়েছে রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান নিয়ে চলমান অস্থিরতা। আগামী বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম। ২০১৯-২০ মৌসুমেই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছিল, উন্নত বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকে অবনমন দেখা যাবে। ক্রিস্টালিনার দাবি অনুযায়ী, উদীয়মান বাজার ভালো করছে। কিন্তু টিকে থাকা বাজারের অবস্থা সন্তোষজনক না। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল না। মাথাপিছু আয়ের সূচকে দরিদ্র দেশগুলো পিছিয়ে থাকবে। বিদ্যমান অস্থিরতায় মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই সুদহার উচ্চ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন ক্রিস্টালিনা। অবশ্য বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের উচ্চ হার বজায় রেখেছে এর মধ্যেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ কিংবা ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকও সম্প্রতি বাড়িয়েছে সুদের হার। তবে এতটুকুই যথেষ্ট বলে মনে করেন না জর্জিয়েভা। তিনি আইএমএফের অবদান তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “করোনার পর থেকেই আইএমএফ অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। আমাদের প্রথম লোন ছিল কিরগিজ রিপাবলিকের জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ মহামারী ঘোষণা দেওয়া মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই। তারপর থেকে আমরা ৯৬টি দেশকে সহযোগিতা করেছি, যা আইএমএফের ইতিহাসে আর কখনও হয়নি। আমরা অনেকের জন্য অনেক কিছু করছি।” সূত্র: দ্য ন্যাশনাল নিউজ, চায়না ডেইলি
বিডি প্রতিদিন/কালাম