নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল কলকাতা। এর মধ্যেই ঘটনাস্থল আরজিকর সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হামলে পড়ে একদল উন্মত্ত যুবক।
এক সপ্তাহ আগে (৯ আগস্ট) হাসপাতালটির পোস্ট গ্রাজুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের নারী ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছেই।
এই ঘটনার পর বুধবার মধ্যরাতে রাজ্যজুড়ে রাস্তায় নামেন নারীরা। মূলত নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মধ্যরাতে আরজিকার মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের পাশাপাশি কলকাতা ও রাজ্যটির জেলায় জেলায় মাঝরাতে পথে নামেন নারীরা। সেই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় 'রাত দখল' (Reclaim The Night)। মোমবাতি হাতে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। একদল যুবক হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করে বলে জানা গেছে।হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ঢুকে তারা ঔষধ, যন্ত্র, জানলা, দরজা, টেবিল, চেয়ার, কলাপসিপল গেট, হসপিটালের বেড ও পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। হাতে লাঠি, ইঁট, হাতুড়ি, লোহার রড নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে একদল ব্যক্তির বিরুদ্ধে। হাসপাতালের ভিতরে আন্দোলনকারীদের যে ধর্ণা মঞ্চ ছিল সেটিকেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও অনেকেই বলছেন হামলাকারীরা কেউই ডাক্তার বা আন্দোলনকারী নন, তারা সকলেই বহিরাগত। প্রায় একশ থেকে দেড়শ মানুষ নির্বিচারে ঢুকে এই তাণ্ডব চালাতে দেখা গেছে। এমনকি হাসপাতালের বাইরে পুলিশকে লক্ষ্য করেও হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে তাণ্ডবকারীদের। স্বভাবতই ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারাও ছিল কার্যত অসহায়। ফলে প্রশ্ন উঠছে কার মদদে হাসপাতালের ভিতর এই ধরনের হামলা চলল?
সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে ডাক্তারদের পাশাপাশি আন্দোলনকারীরাও মাথা গোঁজার আশ্রয়ে ছুটছেন। এমনকি সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমের কর্মীরাও আরজিকর হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এই হামলায় কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক শীর্ষ কর্মকর্তা সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এই তাণ্ডব। একসময় ধ্বংসস্তুপে পরিণত পরিণত হয় সরকারি এই হাসপাতালের একটি অংশ। পরে অবশ্য বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে তাণ্ডবকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়।
নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ছে ডাক্তারদের মধ্যে। পথে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলি। হাত মিলিয়েছে সাধারণ মানুষও। ইতোমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন আরজিকরের প্রিন্সিপাল ডা: সন্দীপ ঘোষ। কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার চলে গিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। দায়িত্ব পেয়ে তারাও তদন্তে নেমে পড়েছে।
ঘটনার পর কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সাথে কথা বলেন রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন অভিষেক।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে অভিষেক লেখেন 'আরজিকর হাসপাতালে যে গুন্ডামি আর ভাঙচুর চলল, তা সব সীমা পার করে গেছে। আমি পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। তাকে বলেছি যাতে প্রত্যেক অভিযুক্তকে চিহ্নিতকরণ করা হয়। রাজনীতির রং না দেখে দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাসধান অভিষেক।
পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের অভিমত গণমাধ্যমের 'দূষিত' প্রচারণার ফলে বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে ওঠে।
কলকাতা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন 'এখানে যা ঘটেছে তার পিছনে রয়েছে গণমাধ্যমের ভুল প্রচারণা- যেটা খুবই বিদ্বেষপূর্ণ ছিল। কলকাতা পুলিশ কী করেনি? এই ঘটনার তদন্তে সবকিছুই করেছে। আমরা পরিবারকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারপরেও গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আমরা ভুল কিছু করিনি।'
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল