গাজায় ১৫ মাস ধরে চলমান সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সূত্র।
বৃহস্পতিবার মধ্যস্থতাকারীরা কাতারে আলোচনায় বসেছিলেন। এই সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় বিমান হামলা চালায়, যাতে অন্তত ১৭ জন নিহত হন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৭০-এ পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘চুক্তি এখনও হয়নি, তবে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। প্রতিটি শব্দ এবং বিস্তারিত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।’
আলোচনার প্রধান বাধা হিসেবে উঠে এসেছে দুইটি প্রধান বিষয়। হামাস চায় যুদ্ধ বন্ধ করে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি গাজা ছাড়ুক। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ শেষ হবে না যতক্ষণ না হামাসকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয় এবং সব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এদিকে গাজায় মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আটজন নিহত হন। একইদিন, মধ্য গাজায় দুটি বাড়িতে বিমান হামলায় নয়জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে একজন বাবা ও তার তিন সন্তানও ছিলেন।
মানবিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, গাজায় ৪৬,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং ২১ লাখ মানুষের বেশিরভাগই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিস এই মানবিক পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর ও লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এটা মেনে নিতে পারি না যে শিশুরা ঠান্ডায় মারা যাচ্ছে কারণ হাসপাতাল ধ্বংস হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা জীবিত এবং মৃত সব বন্দীকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজার মানবিক সহায়তায় শত শত ট্রাক খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। তবে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, সংকট মোকাবিলায় এটি যথেষ্ট নয়।
যদিও চুক্তি এখনও হয়নি, তবে আলোচনাকারীরা এটিকে সবচেয়ে গুরুতর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তারা আশা করছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী সংকট সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল