শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

দক্ষিণ এশিয়ায় বড় পরীক্ষার মুখে ভারতের কূটনীতি

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়

দক্ষিণ এশিয়ায় বড় পরীক্ষার মুখে ভারতের কূটনীতি

স্নায়ু যুদ্ধের সময় গোটা বিশ্বে প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে সেই দিনের পরিবর্তন হয়েছে। একটা দেশ কতটা শক্তিশালী তা প্রমাণ করতে আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় হচ্ছে। দুই প্রভাবশালী দেশ চীন ও ভারত উপমহাদেশে সে কারণেই প্রভাব দেখাতে ব্যস্ত। তবে নানা পটপরিবর্তনের কারণে উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে ভারতের প্রতিবেশীরা। চীন তার সম্প্রসারণবাদী নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে আফগানিস্তান দীর্ঘদিন পর মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রভাব থেকে মুক্ত হচ্ছে। আবার সীমান্ত লাগোয়া নেপালে নতুন সরকার ক্ষমতা নিচ্ছে। ভারতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। আফগান পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তান আরও অনেকটা অনিশ্চিত অবস্থায়। সম্ভবত এই মুহূর্তটা দক্ষিণ এশিয়া ‘গেমের’ পুরনো কিছু নিয়ম নতুন করে লেখার। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। পত্রিকাটি সম্পাদকীয়তে বলছে, আফগানিস্তানে দীর্ঘ সময় জাতীয় সরকারকে সমর্থন করেছে ভারত। সেখানে এখন ক্ষমতা নেওয়ার জন্য মরিয়া তালেবান। এ অবস্থায় তালেবানদের নিয়ে নীতি পরিবর্তন করে কিছুটা কাজ শুরু করা উচিত। উপরন্তু বিভিন্ন উপায়ে ইরান ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত  ভারতের। কারণ, তারা আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে নেপালে যখন সরকারের পালাবদল হচ্ছে, এর অর্থ হলো ভারতকে স্মার্টভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান দেখানো উচিত এবং যিনিই ক্ষমতায় আসুন তার সঙ্গেই কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে কাউকে প্রিয় বানিয়ে নেওয়া উচিত নয়, যেমনটা কাউকে ফেভারিট বা প্রিয় তকমা দেওয়া হয়েছিল এর আগে। কিন্তু তা অনেক সময় এবং সবসময় সুখকর পরিণতি বয়ে আনে না। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু এরই মধ্যে ‘রিয়েলপলিটিকে’ অংশত পরিবর্তন করা হয়েছে, যেখানে রাজাপক্ষে পরিবার দৃঢ়ভাবে জেঁকে বসেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আলাদা। একদিকে বর্তমান সরকার ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান মিত্র। অন্যদিকে এ দেশটির অর্থনীতির রয়েছে সফলতার কাহিনি। ভারতের মতোই এখানে রাজনীতি গভীরভাবে মেরুকরণ করা। ভারতের মতোই এখানেও টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভারতের যে মঙ্গলময় ইমেজ, তা কিছুটা তিক্ত হয়ে উঠেছে। কারণ, তারা ঢাকার যে চাহিদা- সেই পরিমাণ টিকা সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে চ্যালেঞ্জ হলো এই জটিল সময়ে প্রভাব বজায় রাখা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া যে, বিএনপির সঙ্গে কী করবে ভারত, যারা দীর্ঘদিন দিল্লির দিকে মুখ করে আছে।

বিষয়টি আরও জটিল মালদ্বীপের ক্ষেত্রে। সেখানে কারাগারে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ভারতের সহায়তা চান। কিন্তু তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন বেইজিংয়ের দিকে ঝোঁক ছিল তার। সেটাই এ বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। এখানে চীনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী তার ওপর ভিত্তি করে শীতল ‘রিয়েলপলিটিক’ করা যেতে পারে। ভারতকে অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে, যেসব দেশে স্বার্থ আছে, সেখানে কে ক্ষমতায় তার প্রতি কোনো তোয়াক্কা করে না চীন। আফগানিস্তানে তারা সেই নীতি প্রয়োগ করে। তা সত্ত্বেও ভারতের এখনো একটি ভালো সুযোগ আছে।

একদিকে চীনের ঋণের কারণে পাকিস্তানের রয়েছে দৃঢ়ভাবে সমালোচনাহীন নীতি, অন্যদিকে চীন যেভাবে এগিয়ে আসছে তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গভীর সমুদ্র বন্দরে চীনা বিনিয়োগ অনুমোদন না দেওয়ার বাংলাদেশি সিদ্ধান্ত একটি ভালো উদাহরণ। শ্রীলঙ্কা আরেকটি দেশ, যেখানে চীনের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সম্পর্কে কৌশলগতভাবে বৈপরীত্য ব্যবহার করতে পারে ভারত। চীনের চেয়ে ভারতের সম্পদ (রিসোর্স) অনেক কম। এ জন্যই কূটনীতিটা হতে হবে আরও স্মার্ট।

সর্বশেষ খবর