রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন উদ্বেগ ওমিক্রন

নতুন উদ্বেগ ওমিক্রন

করোনায় হাঁপিয়ে ওঠা পৃথিবীতে আবার নতুন আতঙ্ক। সেই করোনাভাইরাসেই। তবে এবার রূপ বদল করে আরও ভয়ংকর রূপে। করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপের নাম ‘ওমিক্রন’। নতুন ভ্যারিয়েন্টকে ‘উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ধরন’ বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-হু। সংস্থাটি জানিয়েছে এই ভ্যারিয়েন্টটির বিপুল সংখ্যক মিউটেশন রয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে এই ভ্যারিয়েন্টে পুনঃসংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রথমবার ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার খবর জানতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পরে বতসোয়ানা, ইসরায়েল, বেলজিয়াম ও হংকংয়েও এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি দেশে যাওয়া এবং সেসব দেশ থেকে প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেশ কিছু দেশ।

এসব তথ্য পাওয়ার পর থেকে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নিয়ে কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, এই ভেরিয়েন্ট কত দ্রুত ছড়ায় এবং টিকা নেওয়ার ফলে শরীরে যে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তা কি এই ভেরিয়েন্টকে ঠেকাতে সক্ষম? এই ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কী করতে হবে? এ ব্যাপারে আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভেরিয়া বলেন, অস্বাভাবিকভাবে এটি রূপান্তরিত হয়েছে এবং অন্য যেকোনো ভেরিয়েন্ট থেকে এটি আলাদা। তিনি বলেন, ‘এই ভেরিয়েন্টটি আমাদের হতবাক করেছে।’ ডি অলিভেরিয়া বলেন, সব মিলে ৫০ বারের মতো জিন বিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে নতুন ওমিক্রন ধরন রূপ পেয়েছে। আর এর স্পাইক প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য বদলেছে ৩০ বারের বেশি। তবে এই ভেরিয়েন্টের ওপর সূক্ষ্মভাবে নজর দিলে আরেকটি বিষয় চলে আসে। ভাইরাসের যে অংশটি মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসে সেই রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেইন বদলেছে ১০ বার। এ পর্যন্ত চিহ্নিত সবচেয়ে সংক্রামক ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই বদল ছিল মাত্র দুবার।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নতুন ভেরিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনের যে রূপান্তর, সেটা উদ্বেগের। কারণ, এর বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা টিকা নেওয়ার কারণে যে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তা কাজ করবে কি না। তবে ইতালির শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট রবার্তো বুরিওনি বলেন, জনসাধারণের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত হবে না। টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, এই ভেরিয়েন্ট নিয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এদিকে হু বলছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব ভালোভাবে বুঝতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এটি কতটা সংক্রামক, তা নির্ধারণ করতে বৈজ্ঞানিকরা এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের একজন শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন ‘প্রায় নিশ্চিতভাবে’ কম কার্যকর হবে। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট জেমস নেইস্মিথ মন্তব্য করেছেন যে : ‘এই ভ্যারিয়েন্টের যদি দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা থাকতো, তাহলে এতদিনে এটি যুক্তরাজ্যে নিশ্চিতভাবে প্রবেশ করতো।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান অ্যান্থনি ফাউচি মন্তব্য করেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পাওয়া রিপোর্ট এটি সম্পর্কে  সতর্ক করলেও তীব্র মাত্রায় অসুস্থতা ঠেকাতে ভ্যাকসিন কার্যকর হতে পারে।

সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে অনেক দেশ : যেসব দেশ তাড়াহুড়া করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের ‘ঝুঁকি যাচাইভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে’ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে হু। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো, এবং সুইজারল্যান্ডও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। জাপান জানিয়েছে আফ্রিকা থেকে আসা নাগরিকদের ১০ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তাদের মোট ৪ বার পরীক্ষা করাতে হবে। আর ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের ছয়টি দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীদের তাদের দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর