শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রাশিয়ার দাবি নাকচ যুক্তরাষ্ট্রের

কোনোভাবেই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। এ দাবি জানিয়েছিল রাশিয়া

ন্যাটোতে কোনোভাবেই ইউক্রেনকে নেওয়া যাবে না। রাশিয়ার এই দাবির জবাবে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। চিঠিতে রাশিয়ার দাবি সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন রাশিয়ার কাছে এই চিঠি পাঠাল। এরপর ব্লিনকেন বলেছেন, তিনি রাশিয়াকে সামনে এগোনোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পথ খুলে দিয়েছেন, যদি রাশিয়া সেই পথে যেতে চায়।’ ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়ার উদ্বেগের বিষয়গুলো তিনি শুনতে রাজি আছেন, কিন্তু এটাও বুঝতে হবে প্রত্যেকটি দেশের তার মতো করে নিজের প্রতিরক্ষার পথ বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, স্টোলটেনবার্গ বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে আছেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘আপনারা জানেন, আমি তার কথাবার্তা নিয়ে মতামত দেওয়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি।’ রাশিয়ার একজন মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, তার দেশ ব্লিনকেনের জবাব ভালো করে পড়ে দেখবে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছে এই জবাব পাঠিয়েছে সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে। তবে চিঠিতে কী লেখা হয়েছে, তা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেন সীমান্তে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তারা দ্রুত তার সমাধান চাইছেন। সে কারণেই চিঠির বয়ান প্রকাশ করা হলো না। তাদের আশা, রাশিয়া চিঠির জবাবে আলোচনায় বসতে সম্মত হবে।

রাশিয়ার দাবি : গত মঙ্গলবার রাশিয়া সীমান্ত সংঘাত নিয়ে তাদের স্পষ্ট অভিমত জানিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, কোনোভাবেই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। জানাতে হবে, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের রাস্তা সবসময়ের জন্য বন্ধ। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার দাবি ছিল, পূর্ব ইউরোপে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো সৈন্য মোতায়েন করছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। সরিয়ে নিতে হবে যুদ্ধ জাহাজ এবং বিমান। আর এই দাবির প্রতিউত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাশিয়া যে প্রতিশ্রুতি চেয়েছে, তা মানা সম্ভব নয়। ন্যাটোর দরজা সবার জন্যই খোলা। রাশিয়াকে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে তাদের বলা হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করলে পূর্ব ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো যে সেনা মোতায়েন করেছে, তা প্রত্যাহার করা হবে।

রাশিয়া অবশ্য প্রথম থেকেই নিজেদের বক্তব্যে অবিচল। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তাদের এই মত না মানা পর্যন্ত সীমান্ত থেকে তারা সেনা প্রত্যাহার করবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল। বস্তুত, শেষ ন্যাটোর বৈঠকে রাশিয়া জানিয়েছিল, তাদের দাবিগুলো না মানলে পরবর্তী ন্যাটোর বৈঠকেও তারা যোগ দেবে না।

এদিকে ইউক্রেন সীমান্তে গত কয়েকদিনে উত্তেজনা আরও বেড়েছে বলেই ইউক্রেনের দাবি। রাশিয়া সেনা মহড়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের ভিতরে তারা সেনা পাঠায়নি। নিজেদের আত্মরক্ষার তাগিদেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির চুক্তি : এরই মধ্যে রাশিয়া জানিয়েছে, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইউক্রেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা খুবই কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ২০১৪ সালের চুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওই চুক্তিতে স্থির হয়েছিল, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির নীতি মেনে চলবে। বস্তুত, পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তে দুই দেশই যুদ্ধের জন্য সেনা সাজিয়ে রেখেছে। তার পরও রাশিয়ার এই বক্তব্য আলোচনার রাস্তা খোলা রাখছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

 

সর্বশেষ খবর