বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মিয়ানমারে সেনাশাসনের দুই বছর

চার পশ্চিমা দেশের নতুন নিষেধাজ্ঞা

গণতান্ত্রিক সরকারকে বন্দুকের নলের মুখে হটিয়ে সামরিক শাসনের দুই বছর গতকাল পার করল মিয়ানমার। দুই বছর আগে ওই দিনে গ্রেফতার করা হয় নোবেলজয়ী অং সান সুচিসহ দেশটির অনেক রাজনৈতিক নেতাকে। দেশটিতে মাঝের সময়টা বেশ উত্তাল কেটেছে। অভ্যুত্থানবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ ও তা দমাতে জান্তার দমন-পীড়নে দেশটিতে বদলে গেছে অনেকের জীবন। বিক্ষোভকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দমন ও জান্তার হামলায় হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে।

মিয়ানমারে ‘গণতন্ত্র হত্যার’ দুই বছর উপলক্ষে সে দেশের গণতন্ত্রপন্থি কর্মীরা ‘নীরব ধর্মঘট’ পালন করছেন। বিক্ষোভকারীরা জনসাধারণকে বুধবার বাড়ির ভিতরে থেকে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বও সামরিক সরকারের বিরোধিতা করে এ বার্ষিকীতে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া সেনাবাহিনী-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে। জনগণের দাবিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না দেশটির জান্তা সরকার। সামরিক বাহিনী বলছে মিয়ানমার এক ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতির’ সম্মুখীন হচ্ছে, ফলে সে দেশে চলতি বছর একটি নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

মিয়ানমারের একজন বিশিষ্ট নাগরিক অধিকার কর্মী তায়জার সান এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, সামরিক বাহিনী যে কারচুপির নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে ‘জনগণ তা মেনে নেবে না’ বলে প্রমাণ করার জন্যই এ ধর্মঘট চলছে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, জান্তার দমন-পীড়নে মিয়ানমারে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছেন। এসব কারণে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। আনা হয়েছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ। কিন্তু তাতে কোনো তোয়াক্কা করছে না জান্তা। রাজনৈতিক বন্দিদের পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা, অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, ভিন্নমত দমনে সামরিক জান্তার অভিযানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

দুঃখের খতিয়ান : সেনাশাসনের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ৮০ লাখ শিশু আর স্কুলে যেতে পারছে না এবং জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দেড় কোটি লোক চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। দেশটির বেশির ভাগ অংশে এক নিষ্ঠুর গৃহযুদ্ধ চলছে। অভ্যুত্থানের পরপরই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনো বিরোধীদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনায় রাজি নয়। এর পরিবর্তে সেনা শাসকরা এমন একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছে যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই অং সান সুচি কিংবা তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে বাদ দেবে। এনএলডি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। তার অনুগতরা জনগণকে সামরিক শাসকের আয়োজিত যে কোনো ভোট বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর