এই পৃথিবীতে যদি আপনি ক্ষুধার্ত, ব্যথিত, অসুস্থ ও নিপীড়িত হন, তবে চিরস্থায়ী পরম সুখের জান্নাতের কথা স্মরণ করুন। জান্নাতের চিন্তা যদি আপনি মন-মস্তিষ্কে বসিয়ে নিতে পারেন, তবে তা সত্যিই আপনার জীবন সহজ ও সুন্দর করবে। আর পার্থিব জীবনে আপনার দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটনকে আপনার কাছে উপহার বলে মনে হবে।
পরকালের জন্য যারা আমল করে তারাই প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান।
কেননা পরকাল পার্থিব জীবনের তুলনায় উত্তম ও চিরস্থায়ী। সবচেয়ে বোকা লোক তারাই, যারা দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় এবং তাকে নিজেদের চিরস্থায়ী আবাস মনে করে। এতেই তাদের সব আশা-ভরসা। এরা যখন কোনো বিপদে পড়ে তখন আপনি এদেরকে সবচেয়ে বেশি দুঃখিত দেখবেন।
পার্থিব ক্ষতির কারণে তারা সবচেয়ে বেশি বিচলিত হয়। কেননা তারা দুনিয়ার তুচ্ছ জীবনের বাইরে আর কোনো কিছুই দেখতে পায় না। তারা শুধু এই অস্থায়ী জীবনটাই দেখে এবং শুধু এর কথাই ভাবে। তারা চায় না যে কোনো কিছু তাদের পরম সুখকে মাটি করে দিক।
যদি তাদের চোখ থেকে অজ্ঞতার পর্দা সরে যেত তবে তারা চিরস্থায়ী আবাস জান্নাত, এর নিয়ামতগুলো, আনন্দ ও প্রাসাদগুলোকে আপন ভাবত এবং তাকে আপন করে পাওয়ার চেষ্টা করত। কোরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে তাদেরকে পরকাল সম্পর্কে অবহিত করা হলে তারা তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করত।
বাস্তবিকই আমাদের উচিত পরকালের বাড়ির প্রতি মনোনিবেশ করা। ওই বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য চেষ্টা করা, যাতে আমরা পরকালের সর্বোত্তম আবাসটি লাভ করতে পারি। বেহেশতবাসীর জীবনধারা সম্পর্কে আমরা কি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখেছি? তারা অসুস্থ হবে না, দুঃখ তাদের কাছেও ঘেঁষবে না, তারা মরবে না, তারা চিরকুমার থাকবে এবং তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ থাকবে উত্তম, নিখুঁত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
তারা সুন্দর গৃহে অবস্থান করবে। জান্নাতে এমন জিনিস পাওয়া যাবে, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শোনেনি এবং মানব মন কখনো যার কল্পনাও করেনি। আরোহী ব্যক্তি ১০০ বছর একটি গাছের নিচে ভ্রমণ করেও এর শেষ সীমায় পৌঁছতে পারবে না। বেহেশতে একটি তাঁবুর দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মাইল। জান্নাতের নদীগুলো সদা প্রবাহিত, এর প্রাসাদগুলো বিশাল এবং এর ফলগুলো শুধু হাতের নাগালের মধ্যেই নয়; অধিকন্তু অতি সহজেই তোলা যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেখানে প্রবহমান ঝরনা থাকবে, সুউচ্চ আসন থাকবে আর থাকবে হাতের কাছে প্রস্তুত পানপাত্র, সারি সারি গদি ও বিছানো গালিচা।’ (সুরা : গাশিয়া, আয়াত : ১২-১৬)
জান্নাতের সুখ হবে অসীম। তবে কেন আমরা বিষয়টিকে গভীরভাবে ভেবে দেখছি না? জান্নাতই যদি আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হয় আর আমরা যদি আল্লাহর কাছে বেহেশতই চেয়ে থাকি, তবে এ দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট যত ভারী মনে হয় তার চেয়ে অনেক কম ভারী মনে হওয়ার কথা। অতএব, জান্নাতের জীবন ভেবে লাঘব হোক অন্তরের ব্যথা। আর আপনারা যাঁরা এই পৃথিবীতে দরিদ্র জীবনযাপন করছেন বা দুর্বিপাকে পতিত সৎকর্ম (নেক আমল) করুন, তাহলেই আপনারা আল্লাহর জান্নাতে বাস করতে পারবেন। আল্লাহর জান্নাত ধনী-দরিদ্র্য সবার জন্য উন্মুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। কেননা তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছিলে। চূড়ান্ত ঘর প্রকৃতপক্ষে কতই না উত্তম!’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ২৪)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন