বেহেশতি যুবকগণের সরদার বলতে সেই সমুদয় জওয়ানদের কথা বলা হয়েছে যারা আল্লাহর পথে যৌবনকালেই শহীদ হয়েছে। হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) তাদের সরদার হবেন। অথবা নবীগণ এবং খোলাফায়ে রাশেদীন ব্যতীত সমুদয় জান্নাতবাসীগণের সর্দার হবেন। কারণ বেহেশতি যুবক বলতে সমস্ত বেহেশতবাসীকে বুঝায়। কেননা বেহেশতে সবাই জওয়ান হবে। সেখানে কোনো বৃদ্ধ থাকবে না। সবাই যুবক এবং সমবয়স্ক হবে।
তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে নিজের ফুল বলে আখ্যায়িত করে বলেন। অর্থাৎ দুনিয়াতে এরা আমার দুটি ফুল। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এতদুভয়কে ফুলের ন্যায় শুকতেন এবং বুকে জড়িয়ে রাখতেন। হজরত আব্বাস (রা.) -এর স্ত্রী উন্মে ফজল রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচি একদা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে আরজ করলেন যে আমি আজ অত্যন্ত দুঃখজনক স্বপ্ন দেখেছি। এমনকি তা প্রকাশ করতে ও আমার শরীর শিহরিয়া উঠছে। রাসুলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইলেন যে বলুন তো শুনি। তিনি বললেন, আমি দেখলাম যে আপনার দেহ মোবারকের এক টুকরা কাটা হলো আর সেই কর্তিত টুকরা আমার কোলে রাখা হলো। এই স্বপ্ন শ্রবণ করে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন আপনি অত্যন্ত ভালো স্বপ্ন দেখেছেন। ইনশা আল্লাহ ফাতেমার ঘরে ছেলে সন্তান জন্ম হবে এবং তা আপনার কোলে দেওয়া হবে।
ফলে তা-ই হলো হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) জন্মগ্রহণ করলেন এবং তাকে হজরত উম্মে ফজলের কোলে দেওয়া হলো। সেই উম্মে ফজল (রা.) বলেন, একদা আমি ইমাম হুসাইনকে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোলে তুলে দিলাম। দেখলাম যে তিনি হুসাইন (রা.) দিকে তাকিয়ে আছেন আর তার চক্ষুদ্বয় মোবারক অশ্রু ভাসাচ্ছে। এটা দেখে আমি বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ। আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক আপনি ক্রন্দন করছেন কেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরে বললেন। জিবরাইল আমার কাছে এসে এই সংবাদ দিয়েছেন, আমার উম্মতের একটি দল আমার এই স্নেহের দুলালকে নিহত করবে। এমনকি আমাকে সেই বধ্যভূমির রক্তে রঞ্জিত একমুষ্টি লাল মাটিও এনে দেখিয়েছে। (বায়হাকি)। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজরত হাসান ও হুসাইনকে ভালোবাসবে সে আমাকে ভালোবাসবে। আর যে এদের প্রতি শত্রুতা রাখবে সে আমার সঙ্গে শত্রুতা রাখবে। হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) হিজরি চতুর্থ সালের ৫ সাবান ও হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) মদিনা শরিফে জন্মগ্রহণ করেন। প্রিয়নবী (সা.) তার নাম রাখেন হুসেইন। মহান রাব্বুল আলামিন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)সহ যারা কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামী গবেষক ও পীর সাহেব সূর্যপুর, কুমিল্লা
বিডি প্রতিদিন/এমআই