ভারতজুড়ে গোমাংস খাওয়ার বিরোধিতা করে আরএসএস-এর মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলগুলি যেখানে সোচ্চার হয়েছে, বিক্ষোভ দেখিয়েছে, সেখানে কলকাতা শহরে তৃণমূলপন্থী বিদ্বজনেরা গোমাংস খেয়ে তার প্রতিবাদ করেছে। যেভাবে মানুষের খাদ্যের ওপর একটা অলিখিত ফতোয়া জারি করার প্রচেষ্টা হচ্ছে তার বিরোধিতা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে। সম্প্রতি দিল্লির কেরল গেস্ট হাউজে গোমাংস বির্তকে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘তারা ঠিক করে দিচ্ছে কোনটা না খাবেন, আর কোনটা খাবেন না। কিন্তু এটা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। উত্তর-পূর্ব ভারতের একটা বড় অংশের মানুষ গোমাংস ভক্ষণ করেন। এটাই তাদের প্রধান খাদ্য। অতএব কেন একজন মানুষের ব্যক্তিগত খাদ্যভাষের ওপর হস্তক্ষেপ করা হবে?’
অথচ সেই কলকাতাই এবার পিছিয়ে আসলো। বিতর্ক এড়াতে আশ্চর্যজনকভাবে রাজ্য সরকারের খাদ্য উৎসবে জায়গা হল না গোমাংসের।
শুক্রবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ই.এম.বাইপাশের ধারে মিলন মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ‘আহারে বাংলা ২০১৫’। বলা ভালো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এই প্রথম কলকাতায় শুরু হল অচেনা খাবারের মেলা। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা।
গোবিন্দভোগ চালের সঙ্গে মোরগ পোলাও, পর্ক ভিন্ডালু, ল্যাম্ব চিলি, টার্কির মাংস, কোয়েলের মাংসের কাবাব, খরগোসের মাংস, ইলিশ, ডাব চিংড়ি যেমন আছে, ঠিক তেমনি ডুমুরের ডালনা, থোড় ছেঁচকি, লাউ চিংড়ির ঘণ্ট থেকে লালশাক, কচুর গোলুতি অজানা খাবারও স্থান পেয়েছে কলকাতার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে। প্রায় দেড়শ' লোভনীয় বাঙালি পদের খাবারের ভিড়ে গন্ধে ম ম করছে এখন মেলা প্রাঙ্গণ। কিন্তু মেলা চত্বরের কোনো স্টলেই গোমাংসের কোনো পদের হদিশ পাওয়া গেল না। কোনো স্টলের সামনেই ‘বিফ’ সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেল না। এমনকি রাজ্য সরকারের খাদ্য উৎসব-২০১৫ ‘আহারে বাংলা’র যে ওয়েবসাইট আছে তার খাদ্যতালিকাতেও ‘বিফ’-এর কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু কেন?
পশ্চিমবঙ্গের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘আমাদের মেনুতে বিফ রাখা হয়নি কারণ এখানে এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে আমি একটা কথাই বলবো যে কোন মানুষ কি খাবে-কি খাবে না তা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়’।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আসলে দেশজুড়ে গোমাংস নিয়ে যেভাবে বির্তক চলছে তাতে এই মেলায় এই পদটিকে ঢুকিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি’। যদিও মানুষ কি খাবে, না খাবে সেখানে রাজ্য সরকার কখনওই হস্তক্ষেপ করতে যাবে না বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বিডি-প্রতিদিন/ ০১ নভেম্বর, ২০১৫/ রশিদা