গ্রাম বাংলার সাড়া জাগানো হুতুম পেঁচা এখন বিলুপ্তির পথে। এ পাখিটি রাতে বিচরণ করে বলে একে নিশাচর পাখি বলা হয়ে থাকে। পেঁচার হুদ—হুদ; বুম...বুম-বউ; দিবি না ঝিদিবি ডাক রহস্যময় ও নানা কুসংস্কারের জন্ম দেয়। অনেক সম্প্রদায় যেমন মান্দি, হাজং, হদি, গারোদের কাছে পূজনীয় একটি পাখি পেঁচা। পরিবেশ ভারসাম্যহীনতা ও মানুষের কারণে আজ এক সময়ের এই সাড়া জাগানো পাখিটি গ্রামের আনাচে-কানাছে পড়ে থাকত। এই হুতুম পেঁচাকে নিয়ে গ্রাম বাংলার ছোট ছেলেমেয়েরা বেশ মজা করত। কৃষকের গোয়াল ঘরে, বাঁশ ঝাড়ে এই হুতুম পেঁচার ছিল বিচরণ। হুতুম পেঁচাকে কেউ পেঁচা, কেউ ধুধু, আবার কেউ লক্ষ্মী পেঁচা বলে থাকে। বর্তমান সময়ের ছোট ছেলেমেয়েরা এই হুতুম পেঁচাকে চিনে না বললেই চলে। নির্বিচারে প্রাকৃতিক বৃক্ষ নিধন আর ফসল আবাদ করতে জমিতে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার এবং অবাধ শৌখিনতার বসে শিকারের কারণে হুতুম পেঁচা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রাণীবিদদের মতে, এই হুতুম পেঁচার নাম কোটরে পেঁচা। ইংরেজি নাম স্পটেড আউলেট, বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাথিনি ব্রামা, গোত্র স্ট্রিগিদি।
সচরাচর দেখা প্রজাতির মধ্যে এ ছোট পেঁচার চোখের পুরো অংশটি সাদা। চোখের তারা এবং পা হলুদ। পিঠের দিক গারো বাদামি এবং তার ওপর বহু সাদা ফোটা থাকে। এরা জোড়ায় জোড়ায় এক জায়গায় বেশি থাকতে পছন্দ করে। সন্ধ্যা ও রাতে এরা চিকিক চিকিক শব্দ করে। অন্য পাখির সঙ্গে গলা মিলিয়েও এরা ডাকে। বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়, টিকটিকি, পাখির ছানা, নেংটি ইঁদুর এরা খাদ্য হিসাবে খেয়ে থাকে। পেঁচা সাধারণত গাছের কোটরে কিংবা দালানের ফাঁক-ফোকরে বসবাস করে। বাংলাদেশে প্রায় ১৬ প্রজাতির পেঁচা দেখা যায়। এর মধ্যে হুতুম পেঁচাকে দেশের প্রায় সব জায়গায় কম বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এদের প্রজনন কাল নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে। এ সময় এরা গাছের ফোকরে বা পুরনো বাসায় ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে প্রায় ৩৫ দিন লাগে। পেঁচা দিনের পাখি নয়, রাতের আঁধারে এরা মানুষের অনেক উপকারও করে থাকে।