বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

উত্তর বাড্ডায় বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন

ফ্ল্যাট ছাড়লেন বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ১৪তলা বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজায় ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ছয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট। অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১২০টি পরিবার আটকে পড়েছিল। তাদের উদ্ধার করে নিরাপদে নামিয়ে আনেন উদ্ধার কর্মীরা। রাজউক ও বুয়েটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ভবনে বাসিন্দাদে না ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। সাহরির ঠিক আগ মুহূর্তে এ ধরনের ঘটনায় ভবনের বাসিন্দা এবং আশপাশের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন ভবনের বাসিন্দারা। তাদের সহায়তায় পানি ও বালি নিয়ে এগিয়ে আসে আশপাশের লোকজন। আবার কেউ কেউ আগুনের তাপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে ছাদে অবস্থান নেন। উদ্ধার কর্মীরা তাদের নিরাপদে নামিয়ে আনেন। অনেকে তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে কাছের আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে যান। আগুন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সব জিনিসপত্র পুড়ে যায়। এ সময় জানালার সান প্রটেক্টেড গ্লাস খসে পড়ে চৌচির হয়ে যায়। এতে রাস্তা কাচের টুকরায় ভরে যায়। আগুন নিভে যাওয়ার পরও পঞ্চম এবং ষষ্ঠতলার বাসিন্দারা নিজ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে পারেননি। ভবনের বাসিন্দা সুমন আকবর জানান, রাত আড়াইটার দিকে তৃতীয় তলায় হোম ডেকর ফার্নিচারের শো-রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখান থেকে মুহূর্তেই আগুন ভবনের পঞ্চমতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে পরে আরও ১৬টি ইউনিট যোগ দেয়। ভবন থেকে দুর্ঘটনার সময় নিরাপদে বের হওয়ার জন্য কোনো ধরনের এক্সিট ওয়ে ছিল না। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লেগেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একই দাবি করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। তারা জানান, যথেষ্ট পানির অভাব ও যাতায়াত সুবিধা না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক মো. সালাউদ্দিন, পরিদর্শক আবদুল হামিদ ও মিলন হোসেন। নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম জানান, প্রিমিয়ার প্লাজার নিচতলার পশ্চিম পাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয় মার্কেটের নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত। যেখানে ছিল গৃহস্থালি সামগ্রীসহ বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকান। ওই সময় মার্কেটের উপরের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অনেকে তাড়াহুড়া করে নিচে নামতে পারলেও কেউ কেউ আশ্রয় নেন ভবনের ছাদে। মুহিদ নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমি এখনই বাসায় উঠছি না। কারণ সিঁড়িতে এবং দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ফাটল আছে। সেগুলোর অবস্থা পুরোপুরি না জেনে ওঠা ঠিক হবে না। বিটিআইর কন্সট্রাকশন বিভাগের প্রকৌশলী আবদুল গাফফার বলেন, ভবনের পাঁচটি টাওয়ারে ১২৬টি ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাটের প্লাস্টার খসে যাওয়া ছাড়া ভয়াবহ কোনো ঝুঁকি নেই। বিম, কলাম সব ঠিক আছে। সেগুলো অল্প সময়ের মধ্যে মেরামত করা হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক জানান, ভবনটি অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এত বড় ভবনে আগুন নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। ফলে আশপাশের বাড়ি, পাশের ঝিল, খাল থেকে পানি সরবরাহ করতে হয়েছে। এ বিষয়ে বিটিআই ডেভেলপার কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের কোম্পানিতে এর আগে কখনো এত বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগুনে প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভবনটি পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, এটি বহুতল আবাসিক ভবন। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক। তাই ফাটল পরীক্ষা না করিয়ে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি রাজউক ও বুয়েট অনুমোদন দেওয়ার পরই এই ভবন ব্যবহার করা উচিত।

সর্বশেষ খবর