শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
দৃষ্টান্ত

নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকাল রুমা

বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার নলী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমা আক্তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সহযোগিতায় প্রতিরোধ করল নিজের বাল্যবিয়ে। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুসারে গতকাল সকালে মানিকগঞ্জ থেকে রুমাকে বিয়ের আংটি পরাতে আসেন দুবাইপ্রবাসী শাহিনের (২২) মা, বাবা ও ভাই। বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন। ছেলেপক্ষের অতিথিদের জন্য ৬ হাজার টাকা দিয়ে খাসি কেনা হয়েছে। বিয়ের বিরোধিতা করে রুমা তার মা-বাবাকে জানিয়ে দেয় সে কিছুতেই বিয়ে করবে না। সে আরও লেখাপড়া করতে চায়। মা-বাবার সাফ কথা— এ  বিয়ে তাকে করতেই হবে। ছেলের মা-বাবা আংটি পরিয়ে যাবেন, ছেলে দেশে এলে বিয়ে হবে। মা-বাবার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে রুমা। পাশের বাড়ি গিয়ে মোবাইল ফোনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমানকে জানায়। প্রধান শিক্ষক তত্ক্ষণাৎ রুমাকে স্কুলে আসতে বলেন। রুমা তার সহপাঠী বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট সদস্য নাদিয়া আক্তারের সহায়তায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে উপস্থিত হয়। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। রুমার একটিই দাবি— সে বাল্যবিয়ে করতে চায় না। সে আরও লেখাপড়া করতে চায়। ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিষয়টি সাংবাদিক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস, ইউপি সদস্য সুলতান আহম্মেদ শিকদার পাকড়াও করে আনেন মেয়ের বাবা-মা ও ছেলের বাবা-মাকে। উভয় পক্ষ বাল্যবিয়ের প্রস্তুতির কথা স্বীকার করেন। লিখিত অঙ্গীকার করেন উভয় পক্ষের অভিভাবকরা বাল্যবিয়ে তারা করাবেন না। মেয়ের বাবা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, মেয়ে যদ্দুর পড়াশোনা করতে যায় তদ্দুর আমি পড়াব।’ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমরুল কায়েস রুমার সাহসী পদক্ষেপে তাকে পুরস্কৃত করার এবং তার লেখাপড়ার সব ব্যয়ভার বহনের ঘোষণা দেন। রুমা আক্তার বলে, বরগুনায় কোনো মেয়ে যেন বাল্যবিয়ের শিকার না হয়। সে তার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে।

সর্বশেষ খবর