রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাসার কাছেই শিশুধরা

মির্জা মেহেদী তমাল

বাসার কাছেই শিশুধরা

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শেখ। দুপুরে তার মোবাইলে একটি ফোনকল আসে। হ্যালো, কে বলছেন? ওপাশে নারীকণ্ঠ, হ্যালো, আপনি কি জাহাঙ্গীর সাহেব বলছেন? হ্যাঁ বলছি, জাহাঙ্গীরের জবাব। আপনার ছেলে আল আমিন এখন আমাদের কাছে। চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না। আপনার ছেলের ক্ষতি হয়ে যাবে। তাকে আর খুঁজেও পাবেন না। ফোনে এমন কথা শুনে হতবাক জাহাঙ্গীর। বলে কি? একটু আগেই তার ছেলে তার সামনে ঘোরাঘুরি করছিল। মেলায় যাবে বলছিল। ছেলেকে নিয়ে মেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এমন ফোন পেয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। জাহাঙ্গীর ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার স্ত্রীকে ডাকেন। স্ত্রী এসে বলেন, না আল আমিন তো ঘরে নেই। এরপর আল আমিনের খোঁজ শুরু হয়। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন জাহাঙ্গীর শেখ। ঘটনাটি গত সোমবারের। শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযানে নামে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই অপহরণ কারীদের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দেখতে পায়, তারা বরিশালের দিকে যাচ্ছে। পিবিআই নিশ্চিত, আল আমিন সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের হাতে পড়েছে। পিবিআই সদস্যরা অপহরণকারী চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ফোন করেন। সেই নারী অপহরণকারী তাদের টাকা নিয়ে আসতে বলে। সে অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদস্যরা সদরঘাট এলাকায় অবস্থান নেন। অপহরণকারী আসবে টাকা নিতে সেখানে। কিন্তু পুলিশ কোনো নারীর দেখা পায় না। হঠাৎ পুলিশ দেখতে পায়, এক তরুণ তাদের দেখে দৌড়ে পালাচ্ছেন। পুলিশ নিশ্চিত হয় সেই অপহরণকারী দলের সদস্য। পুলিশও তার পিছু নেয়। অবশেষে ধরা পড়ে সেই যুবক। তার দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ আল আমিনকে উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ সেই নারীর সন্ধান চায়। কিন্তু অপহরণকারী রুহুল আমিন পুলিশকে জানায়, কোনো নারী নয়। মোবাইলে একটি অ্যাপস ব্যবহার করে সে নারীকণ্ঠে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে। পুলিশ জানায়, রুহুল আমিন একজন পেশাদার অপহরণকারী। বাবা- মায়ের মোবাইল ফোন নম্বর জানা এমন ৮-১০ বছরের বাচ্চাদের টার্গেট করে অপহরণ করে রুহুল আমিন। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খুঁজতে থাকে শিকার। বাবা-মায়ের অজান্তে খেলতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়া ছোট বাচ্চাগুলোকে কখনো খেলনা, কখনো মেলা দেখানোর কথা বলে, আবার কখনো চকলেট বা জুস খাওয়ানোর কথা বলে সবার অজান্তে নিয়ে চলে যায়। এরপর বাচ্চাটার কাছ থেকেই ফোন নম্বর নিয়ে মোবাইলের অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে বাচ্চা ছেলেটির বাবা-মাকে ফোন করে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানায়। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সাকিব (৬) নামে এক শিশুকে অপহরণ করে একই চক্র। অপহরণের পরই সাকিবকে বরিশালে নিয়ে যায়। তার পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। ওই ঘটনায় সাকিব উদ্ধার হলেও অপহরণকারী কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ। অপহরণের খবর শুনেই বাবা-মা হন দিশাহারা! ফোনে বাবা-মায়ের আকুতি আর অপহৃত শিশুটির কান্নাও পাষে র কানে যায় না। সব মায়া-মমতা উপেক্ষা করে একসময় বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করে সে। টাকা পেলে ছেড়ে দেয় বাচ্চাকে। টাকা গেলেও সন্তান হারিয়ে দিশাহারা পরিবার সন্তানটিকে ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। যাত্রাবাড়ীর মৃধাবাড়ী, শনির আখড়াসহ অন্যান্য এলাকায় বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে রুহুল। অবশেষে আল আমিন নামের বাচ্চা অপহরণের ঘটনায় নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার করা হয় তাকে। যাত্রাবাড়ী থানা আর পুলিশের পিবিআইর ঝানু টিমের অসামান্য তৎপরতায় পাতা ফাঁদে পা দেয় রুহুল। ওর কাছ থেকে উদ্ধার হয় শিশু আল আমিন। জারিজুরি বাদ দিয়ে বাছাধন এবার স্বীকার করে সব ঘটনা। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বাচ্চাদের একা বের না হতে দেওয়াই ভালো। বাইরে গেলেও চোখে চোখে রাখতে পারলে উত্তম। এ ধরনের কুলাঙ্গারদের কাছ থেকে আমাদের প্রিয় শিশুসন্তানগুলো অন্তত নিরাপদ থাকুক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর